প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪
চাঁদপুর সদরে জোর প্রচারণা ॥ সব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর সদর উপজেলায় উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্র্তের জোর প্রচারণা। পোস্টার ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে সড়কের আশপাশ ও গ্রামীণ জনপদ। চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামী ২১ মে। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে চাঁদপুর সদর আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বলয়েরই অধিকাংশ প্রার্থী।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সদর উপজেলার অধিকাংশ প্রার্থীই মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির অনুসারী। মূলত মন্ত্রীর গ্রুপ পলিটিক্সে নিজেদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, নেতা-কর্মী ও জনসমর্থন কার কত বেশি তা জানান দিতে একই গ্রুপের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচনে। নিজেদের মধ্যে সংঘাত হবারও শঙ্কা রয়েছে বলে আঁচ করছেন স্থানীয়রা। একজন তরুণ চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সংঘাত আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। তবে এই নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনেকটাই নীরবে রয়েছেন। মন্ত্রীর গ্রুপের এই বিরোধে জড়াতে চান না তারা। তবে শোনা যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ঘোড়া মার্কার প্রার্থী হুমায়ুন কবির সুমনকে সমর্থন দিয়েছেন।
তিনটি পদেই এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে চেয়ারম্যান পদে মোঃ আইয়ুব আলী বেপারীর দোয়াত কলমের সাথে ঘোড়া প্রতীকের অ্যাডঃ হুমায়ুন কবির সুমনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কাপ পিরিচণ্ডআনারসের মধ্যেও লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এই উপজেলার সব প্রার্থীই সমানতালে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারো চেয়ে কেউ ভোটের প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের ওয়ার্ড এবং পৌরসভা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গণসংযোগ করে ভোট চাইছেন আইয়ুব আলী বেপারীর দোয়াত-কলমের পক্ষে। অপরদিকে চাঁদপুর শহর কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ পরিবারের নেতা হিসেবে পরিচিত অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারীর ছোট ভাই অ্যাডঃ জসীমউদ্দিন পাটোয়ারী ঘোড়া মার্কার প্রার্থী অ্যাডঃ হুমায়ুন কবির সুমনের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান কাপ পিরিচ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া মোটরসাইকেল এবং চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী মাঝির বড় ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব মাঝি আনারস প্রতীক নিয়ে ভোটের এই যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একে অপরের সাথে।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। তারা হলেন যুবলীগ নেতা মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার (তালা), সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল বারাকাত মোঃ রেজওয়ান (চশমা) এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল কাদের মাস্টারের কনিষ্ঠ পুত্র মোঃ নুরুল হায়দার সংগ্রাম (টিউবওয়েল)।
মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিপ্রা দাস (ফুটবল) ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার শিমু চেয়ারম্যানের মেয়ে রেবেকা সুলতানা মুন্না (পদ্মফুল)।
সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা বলছেন, চেয়ারম্যান পদের ৫ জনই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় সাধারণের মাঝে জল্পনা, ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে, কে হবেন উপজেলা চেয়ারম্যান? ভাইস চেয়ারম্যান পদেও কারা জিতবে? ভোটের হিসাব মিলাচ্ছেন তারা।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর সদর উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার ৪ লাখ ১৭ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৬ হাজার ৮০৩ জন এবং মহিলা ২ লাখ ৩০৭ জন ও হিজড়া ভোটার ১ জন।
চাঁদপুর সদরে মোট ভোট কেন্দ্র ১৩৪টি, ভোট কক্ষ ১ হাজার ৭টি।