শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি আবাদ বাড়ছে
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

প্রায় সাড়ে তিন দশক পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের শোভান গ্রামের সহিদ তালুকদার (৫১) কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে বিষমুক্ত সবজি চাষের আবাদ শুরু করেছিলেন। ক্রমশ সেই আবাদ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত ৫ বছর পূর্বে ভাসমান বেডের এই প্রযুক্তি পুরো জেলার মডেল হলেও ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকাকে ব্যবহার করার সুযোগ থাকলেও সেটি কাজে লাগানো হচ্ছে না। যদিও কৃষি বিভাগ ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয়করণ প্রকল্প (ডিই অংগ)-এর মাধ্যমে ভাসমান বেড তৈরি এবং চাষাবাদ বিষয়ে প্রতিবছর প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়াও বেড তৈরিতে অর্থ, সার বীজ, ক্ষেত রক্ষায় বেড়া দেয়াসহ নানা ভাবে সহযোগিতা করছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানে অধিক হারে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ফরিদগঞ্জের শোভান, সেকদী, বাগপুর, সাফুয়া, চরকুমিরা, ধানুয়া ও টুবগিসহ প্রায় ৬২টি এলাকায় কৃষক ১৫ থেকে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রায় ৫ শতাধিক বেড তৈরি করে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছেন।

জানা গেছে, বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬০ মিটার দৈর্ঘের ১৩০টি বেডের জন্য বেড প্রতি ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে পুরো উপজেলায় ১০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি অধিদপ্তর। সেই অনুযায়ী প্রতিবছর এই বরাদ্দ বাড়ার কথা।

বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদী গ্রামের চাষি শহিদুল্লাহ তপাদার বলেন, কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ভাসমান বেডে নানা জাতের শাক, কচু, লাউ, কুমড়ো, টমেটোসহ অন্তত বিভিন্ন চারা রোপণ করা হয়। আষাঢ় মাসে শুরু হয় বেড তৈরি। একটা বেড তেরি করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। আর চারা রোপণ করতে সময় লাগে ১ মাস। চারা বড় হলে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাইকাররা আসেন ক্রয় করতে।

কৃষক ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, এক শতাংশ পরিমাণ ধাপ তৈরি করতে আমাদের প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর আয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি শতক বেড থেকে লাভ থাকে ৪ হাজার টাকা। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন শেষে ওই বেডকে ভেঙ্গে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে আমরা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করি। শীত মৌসুমে বেডের বদৌলতে চাষে ও রাসায়নিকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছি।

সাফুয়া গ্রামের কৃষক আঃ ছাত্তার জানান, তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গত দুই বছর পূর্বে ডাকাতিয়া নদীর তীরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছেন। তার মতো নাসির, মজিব, আব্বাছ, হোসেনসহ অনেকেই এখন ভাসমান বেডে আবাদ করে সফল।

সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাগপুর গ্রামের আব্দুল কাদের এ পদ্ধতিতে এ গ্রামের শত শত কৃষক কামতা থেকে গল্লাক ওয়াপদা খালের পাশে ভাসমান বেডে আগাম শীতের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।

স্থানীয়রা জানায়, ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা নিয়ে ফি বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় জেলে ও নৌপথে মালামাল পরিবহনকারীদের। উপজেলার ১০ হাজার জেলে পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস ডাকাতিয়া নদীকে কচুরিপানা মুক্ত রাখতে বিভিন্ন সময়ে বামদলসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলন করে। ১৯৮৭ সালে কচুরিপানা পরিষ্কার করার পর প্রশাসন ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় একশ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে কচুরিপানাকে নদী থেকে উঠিয়ে উপরে কম্পোস্ট সার তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করে। এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কচুরিপানাকে নদী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটি বাস্তব সম্মত না হওয়ায় কয়েক বছর পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এসব প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হলেও লাভ কতটুকু হয়েছে তা ভেবে দেখার বিষয়। বরং ভাসমান বেড তৈরির মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধি পেত।

এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, কৃষক ভাসমান বেডে ফসল ফলানোর মাধ্যমে সবজি চাষে কৃষকের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সহায়তা এবং পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। কচুরি স্তূপের ওপর ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় এ ফসলের চাহিদা সবার কাছে অনেক বেশি। বিষমুক্ত ফসল ও সবজির বাজারে ও সব স্থানে অনেক চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি ওইসব সবজি চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে। তাছাড়া ভাসমান বেডে সবজি চাষ শেষে এসব বেডে পরবর্তীতে তরমুজ আবাদ করা সম্ভব। আমরা ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তরমুজের বীজ সংগ্রহ শুরু করেছি। এগুলো কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে আরেকটি বিপ্লব ঘটবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়