মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০

রাতের আঁধারে পুরোহিতের বিদ্যুৎ মিটারে অগ্নিসংযোগ ॥ আতঙ্কে স্ত্রীর মৃত্যু
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

ফরিদগঞ্জে রাতের আঁধারে বসতঘরের বিদ্যুতের মিটারে অগ্নিসংযোগ করে মিটারটি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রতিবেশীরা আগুন দেখতে পেয়ে নেভানোর ফলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় পরিবারটি। আবার মিটারে ধরা আগুন নিভাতে গিয়ে লোকজন মিটারের ওপর কেরোসিন মিশ্রিত গামছার পোড়া অংশ দেখে এবং সেটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ক’দিন পর গৃহকত্রী স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া মিটারের স্থলে নতুন মিটার ও সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে এসে ঘরের চালের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাওয়ার বিরোধিতার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয় পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। ফলে একদিকে স্ত্রী হারানোর শোক, অন্যদিকে গত প্রায় এক মাস ধরে বিদ্যুৎহীনভাবে কষ্টকর দিনাতিপাত করছেন হারাধন চক্রবর্তীর পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের বৈচাতলি গ্রামের।

জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত বৈচাতলি গ্রামে বয়োবৃদ্ধ হারাধন চক্রবর্তীর (৭০) বসতঘরের বৈদ্যুতিক মিটারে গত ৮এপ্রিল গভীর রাতে আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুনের এই ঘটনার বিষয়ে হারাধন চক্রবর্তীর ছেলে সমীর চক্রবর্তী বাদী হয়ে নিরঞ্জন চক্রবর্তীকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অন্যদিকে নিরঞ্জন চক্রবর্তী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে তার সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ করে পাল্টা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সুবাস সরকার ও শ্রীবাস সরকার জানান, ওই দিন রাতে একই গ্রামের মন্দিরে কালী পূজা শেষে বাড়ি ফেরার সময় তারা পুরোহিত হারাধন চক্রবর্তীর বসতঘরে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার দেন। দ্রুত তারা কাছে গিয়ে দেখতে পান, ঘরের বিদ্যুতের মিটারে আগুন জ্বলছে। তখন আশপাশের লোকজনসহ এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আগুন নেভানোর সময় মিটারের ওপর থেকে একটি পোড়া গামছা নিচে পড়ে। পরে তারা ওই গামছাতে কেরোসিনের গন্ধ পান। অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘরের মধ্যে থাকা হারাধন চক্রবর্তীর ছেলে সমীর চক্রবর্তী লোকজনের ডাক-চিৎকারে জেগে উঠে আগুনের দৃশ্য দেখতে পান।

হারাধন চক্রবর্তী জানান, তিনি কালী পূজায় পৌরোহিত্য করতে পাশের গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তার স্ত্রী ঢাকায় চিকিৎসাজনিত কারণে অবস্থান করছিলেন। ঘরে শুধুমাত্র তার একমাত্র ছেলেই ছিলো। এই ঘটনার পর তার স্ত্রী ঝর্ণা চক্রবর্তী বাড়ি ফিরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে গত ২২ এপ্রিল স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আগুনের ঘটনার পর পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা পুড়ে যাওয়া মিটার নিয়ে যায় এবং সংযোগ আপাতত বিছিন্ন করে। পরবর্তীতে নূতন মিটারসহ পুনঃসংযোগের জন্যে আবেদন করলে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তার ঘরে মিটার লাগাতে আসলে তার সাহোদর নিরঞ্জন চক্রবর্তী মুঠোফোনে একই বাড়ির শান্ত চক্রবর্তীকে কল দিয়ে পল্লীবিদ্যুতের লোকজনকে ধরিয়ে দেয়। এ সময় শান্ত চক্রবর্তী তার ঘরের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দিবে না বলে জানালে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ না দিয়েই ফিরে যায়। ফলে গত প্রায় একমাস ধরে হারাধন চক্রবর্তী বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। তার মৃত স্ত্রীর লাশ শ্মশানে নিতেও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তার ছোটভাই এসব ঘটনার জন্যে দায়ী বলে তার সন্দেহ। তাই ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে।

হারাধন চক্রবর্তীর ছোট ভাই নিরঞ্জন চক্রবর্তীর জানান, আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে আমি জানি না। কিন্তু আমার ভাই এই ঘটনার বিষয়ে আমার পরিবারকে জড়িয়ে নানা কথা বলায় আমি আর সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ করেছি ইউনিয়ন পরিষদে। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন ভাইয়ের ঘরে সংযোগ দিতে আসলে পাশের ঘরের শান্ত চক্রবর্তী (ঢাকায় অবস্থানরত)কে ফোনে ধরিয়ে দেই। শান্ত তার ঘরের উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন না দেয়ার জন্যে বললে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ চলে যায়।

মুঠোফোনে শান্ত চক্রবর্তী জানান, তার বসতঘরের ওপর দিয়ে হারাধন চক্রবর্তীর বিদ্যুতের মিটারের সংযোগ না দিতে পল্লীবিদ্যুতের লোকজনকে তিনি নিষেধ করেন তার ঘরের নিরাপত্তার স্বার্থে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বৈচাতলি গ্রামে চক্রবর্তী পরিবারের দুই সহোদরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। সর্বশেষ আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলহ আরো বড়ালো। তবে আগুনের ঘটনাটি নাশকতা। পুলিশের উচিত তদন্ত করে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা।

ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই কামাল হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন গিয়েছি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়