সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   খাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
  •   নৌ পুলিশের হয়রানি বন্ধে জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে জেলেদের লিখিত আবেদন
  •   হাসান আলী মাঠে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শততম দিনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
  •   মাদ্রাসা খাদেমের লাশ নদী থেকে উদ্ধার
  •   পল্লবীতে দুই ছেলেকে জবাই করে হত্যার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১:২২

কাজীর যোগসাজশে ২ লাখ টাকার কাবিন হয় ১০ লাখ!

হাইমচরে ভয়ঙ্কর প্রতারক এক নারীর প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে নিঃস্ব তিন যুবক

স্টাফ রিপোর্টার
হাইমচরে ভয়ঙ্কর প্রতারক এক নারীর প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে নিঃস্ব তিন যুবক
প্রতিকী ছবি

হাইমচর উপজেলায় এক নারীর প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে তিন যুবক। প্রথমে প্রেম, তারপর নানা কূটকৌশল অবলম্বনে বিয়ে ও মোটা অংকের কাবিন। বিয়ের ৫/৬ মাস পরেই হয় ছাড়াছাড়ি। কাবিন নামক টাকার জন্যে মামলা দিয়ে তিন যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে এই নারীর বিরুদ্ধে। মায়ের প্ররোচনায় এমন কুকর্ম করছেন সুন্দরী মিতু নামক ওই নারী। তার প্রতারণায় তিন যুবককে কোর্টের বারান্দায় দৌড়াতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । এ নারীর ফাঁদে আটকা পড়েছেন পুলিশ সদস্য, প্রবাসী ও ব্যবসায়ী। এদিকে কাজীর যোগসাজশে ২ লাখ টাকার দেনমোহর হয়ে যায় ১০ লাখ টাকা--এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য শাহাদাত হোসেন। শাহাদাত হোসেন জানান, কালাচকিদার মোড় এলাকার মৃত মুনছুর বেপারীর মেয়ে মিতু আক্তারের সাথে মোবাইলে পরিচয় হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে মিতু শাহাদাতকে তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তাদের প্ল্যান মতো এলাকার কিছু লোক দিয়ে তাকে আটক করে মিতুকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। ২ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। পরবর্তী সময়ে সে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করতে থাকে। এ বিষয় নিয়ে মিতুর সাথে স্বামী শাহাদাতের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়। শাহাদাত কাজী অফিস থেকে কাবিননামা উঠিয়ে দেখেন সেখানে ১০ লাখ টাকা কাবিন লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে কাজী লিটনের কাছে শাহাদাত 'এতো টাকা কাবিন হলো কী করে' জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সঠিক উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। কাজী এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন প্রধানীয়ার সাথে কথা বলতে বলেন। এদিকে ভয়ংকর প্রতারক মিতু তাকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিতু চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দেন। এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মিতু। চাঁদপুর আদালতে মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলায় তদন্ত করার জন্যে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিনকে দায়িত্ব দেয় আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে গত ১৭ মার্চ তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টে তিনি মামলার অভিযোগের সত্যতা পাননি বলে আদালতকে জানান। এদিকে প্রতারণা করে ২ লাখ টাকার কাবিন ১০ লাখ টাকা করায় কাজী আবুল কালাম আজাদ লিটনের প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শাহাদাত হোসেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মিতু ও তার মা কাজীকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২ লাখ টাকার কাবিন ১০ লাখ টাকা নিকাহ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি কাজী লিটনের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করলে কাজী তাকে জানান, ১০ লাখ টাকা কাবিন ২ লাখ করা যাবে, তবে টাকা বেশি দিতে হবে। শাহাদাতের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকে তদন্ত করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। শাহাদাত হোসেন আরও জানান, এ নারীর প্রতারণার শিকার গন্ডামারা গ্রামের ওমর ফারুক পলাশ নামের আরেক যুবক। মিতুর সাথে আসা যাওয়ার পথে পরিচয় হয় পলাশের। পরবর্তীতে তাকেও বিয়ে করার জন্যে চাপ প্রয়োগ করেন মিতু। সে বিয়ে করতে রাজি না থাকায় তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায় এ নারী । মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পলাশকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় মিতু। মা এবং মেয়ে দুজন মিলে মানুষজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করায় লিপ্ত রয়েছে। মোটা অংকের টাকা পেলে হয়রানি থেকে মুক্ত, টাকা না পেলেই মামলা দিয়ে চলছে হয়রানি । অভিযুক্ত নারী মিতুর এ লোভ লালসা ও প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি তার প্রথম স্বামী তৌফিক। তার বিরুদ্ধেও করেছেন ২টি মামলা। তিনি একজন কাতার প্রবাসী। তিনি জানান, ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে তার সাথে মিতু আক্তারের বিবাহ হয়। বিবাহের পর তার ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। বিবাহের পর সে প্রবাসে চলে যায়। মিতু বিভিন্ন ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতো, সে সারাদিন বাহিরে থাকতো। যা আমার পরিবার মেনে নেয় নি। তার চরিত্রে সমস্যা ছিল। ২০২১ সালে আমি বাড়িতে আসলে আমার বাসা থেকে পাসপোর্ট, চেক বই নিয়ে যায় মিতু। আমি তা জানতাম না। বিদেশ যাওয়ার জন্যে আমি থানায় পাসপোর্ট হারিয়েছে জিডি করে পুনরায় আরেকটি পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে চলে আসি। আমি বিদেশে আসার আগে সে আমার কাছ থেকে ডিভোর্স চায়। তাকে কাবিনের টাকা ও ভরণ পোষণের টাকা দিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু আমি বিদেশ আসার পর সে আমার হারানো চেক বই দিয়ে আমার নামে ১০ লাখ ও ১২ লাখ টাকা পাবে অভিযোগ করে আদালতে দুটি মামলা করে। সে তার মায়ের প্ররোচনায় আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তার হয়রানির শিকার একাধিক যুবক হয়েছে। এর একটা সুরাহা হওয়া উচিত। মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সাজিয়া আফরিন জানান, চাঁদপুর আদালত থেকে আমাকে শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলায় তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি তদন্তের স্বার্থে মিতুর সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়। তারপরও আমি তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করবে। দেনমোহর সম্পর্কে কাজী আবুল কালাম আজাদ লিটন জানান, শাহাদাত ও মিতু আক্তারের বিয়ের রেজিস্ট্রিতে ১০ লাখ টাকা কাবিন করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বানোয়াট। অভিযুক্ত মিতু আক্তার বলেন, আমি অভিযোগ করেছি বা না করেছি সেটা আদালত বুঝবে। আপনারা আমার কাছ থেকে জানার কে? তিনি মুখের ভাষা খারাপ করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে ফোন কেটে দেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়