রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ফরিদগঞ্জের অধিকাংশ মার্কেটে টয়লেট সঙ্কট

পুরুষদের চেয়ে নারীদের মারাত্মক ভোগান্তি

ফরিদগঞ্জের অধিকাংশ মার্কেটে টয়লেট সঙ্কট
নূরুল ইসলাম ফরহাদ ॥

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার অধিকাংশ মার্কেটে কাস্টমারের জন্যে রাখা হয়নি টয়লেট। যে ক’টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে তা দুর্গন্ধময় ও নোংরা। সীমিত সংখ্যক পাবলিক টয়লেটগুলো নারীদের ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। নারীদের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত কিছু পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা দরকার।

এ অঞ্চলটি প্রবাসী অধ্যুষিত বলে নারীরা মার্কেটমুখী। যেসব নারীর স্বামী প্রবাসী তারা টুকটাক কেনাকাটায় মার্কেটে চলে যান। ফরিদগঞ্জে এমনও পরিবার রয়েছে, যেখানে পুরুষ বলতে কেউ নেই। তাই তাদের কাঁচা বাজার, মুদি বাজার করতে বাজারে আসতে হয়। ঈদের শপিংতো অঘোষিতভাবে নারীদের দায়িত্বে পড়ে গেছে। বর্তমানে কিছু কিছু নারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলে বসেছেন। বাজারে তাদের কর্মব্যস্ততার কারণে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়। তাই নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি।

পাবলিক টয়লেটগুলোতে পুরুষ, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা রাখলে সবার জন্যে সুবিধা হবে। এছাড়া ভেতরে হাত ধোয়া, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যে সোলার সিস্টেম এবং মালামাল রাখার জন্যে লকারের ব্যবস্থা রাখা, নিরাপত্তার জন্যে সামনে সিসি ক্যামরা বসানো যেতে পারে। নারীদের টয়লেটে সার্বক্ষণিক নারী কর্মী নিয়োজিত রাখতে হবে। মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্যে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট অত্যন্ত জরুরি।

পাবলিক টয়লেটের অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছে। যা পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে। জনগণের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে জনাকীর্ণ স্থানে পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে হবে। চাকুরি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ প্রয়োজনে ফরিদগঞ্জে প্রতিদিন প্রায় হাজারো মানুষ বাসা থেকে বের হয়। অধিকাংশ মানুষেরই মলমূত্র ত্যাগের জন্যে শৌচাগার প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যা খুবই কম। যেগুলো রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে মানুষ বেশি সময় ধরে প্র¯্রাব, পায়খানা আটকে রেখে কিডনিজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের শৌচাগার ব্যবহারে আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। মানুষ নিরূপায় হয়ে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করছে। ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অপরদিকে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক বার টয়লেট ব্যবহার করার কারণে নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে নারীরা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলেও পাবলিক টয়লেটগুলোতে তাদের জন্যে কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের মার্কেটগুলোতে ঘুরে টয়লেটের করুণ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ত্রিতল বিশাল মার্কেট ‘হাজী আব্দুল আলী সুপার মার্কেট’। এখানে কাস্টমার এবং দোকানদারের জন্যে কোনো টয়লেট রাখা হয়নি। ২য় এবং ৩য় তলায় অফিস ও আবাসিক হোটেলের টয়লেট ব্যবহার করতে হয় দোকানদারদের। এছাড়া কেউ কেউ বাসস্ট্যান্ড মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। বাসস্ট্যান্ডে এছাড়াও একাধিক ছোট ছোট মার্কেট এবং বহু দোকান রয়েছে। কিন্তু কোথাও দোকানীদের জন্যে টয়লেট নেই। লিংক রোড, কলেজ রোডেও একই অবস্থা। তুলাতলি ফাতেমা মার্কেটে দোকানদারের জন্যে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও কাস্টমারের জন্যে নেই। তুলাতলি অঞ্চলের প্রায় সব দোকানদার তুলাতলি জামে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করে। ভান্ডারী মহল মার্কেটে কোনো টয়লেট নেই। ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের মার্কেট ‘জয়া প্লাজায়’ টয়লেট নেই। তবে তিনি দোকানদারের জন্যে বাসায় টয়লেটের ব্যবস্থা করেছেন, কিন্তু অস্বস্তির জন্যে সেখানে যেতে চাচ্ছেন না কেউ। ওয়াপদার সামনের দোকানদাররা ওয়াপদার ভিতরে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করছেন। উপজেলা গেট সংলগ্ন দোকনদাররা উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করেন। প্রফেসর মজিদ মার্কেট এবং মাদ্রাসা মার্কেটের দোকানদারদের জন্যে টয়লেট নেই। এখানকার দোকানদাররা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করছেন। সবুজ মার্কেট (হল মার্কেট), কাকলী মার্কেট, রাজু মার্কেটে দোকানদারদের জন্যে কোনো টয়লেট রাখা হয়নি। কাস্টমারের জন্যেতো দূরের কথা। মধ্যবাজারের মানুষ মধ্যবাজার জামে মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করছেন। ব্যতিক্রম মার্কেটগুলো হলো সিটি শপিং সেন্টার, কলাবাগান ও লাকী সুপার মার্কেট। এ মার্কেটগুলোতে দোকানদারদের জন্যে টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

উপজেলা সদরে যে ক’টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে তা ব্যবহারের অনুপযোগী।

হল মার্কেটের নাজিম গার্মেন্টসের প্রোপ্রাইটর নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের মার্কেটে কোনো টয়লেট নেই। পাশের মসজিদের টয়লেটে যেতে হয়। অনেক কষ্টে আছি ভাই। প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে মাঝে মাঝে বাড়িতে চলে যেতে হয়।

তরুণ কবি ও কসমিক এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফরিদগঞ্জ শাখার ম্যানেজার ফাতেমা আক্তার শিল্পী এ প্রতিনিধিকে বলেন, মানুষের সব কিছুর আগে টয়লেটের চিন্তা করা দরকার। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বিশেষ করে নারীরা এ কারণে বিশাল সমস্যায় ভুগছে। মার্কেটের মালিকগুলো খুবই উদাসীন। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ ফারুকুল ইসলাম বলেন, নারীদের জন্যে আলাদা টয়লেট সেটা পৌরসভার কাজ। মার্কেটের মালিকরা চিন্তা করে, একটা দোকান বাড়তি হলে বাড়তি ইনকাম হবে। টয়লেট করে কী হবে? ঠিক আছে, আমি মালিকদের সাথে কথা বলে দেখি কী করা যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, দীর্ঘ সময় প্র¯্রাব ধরে রাখলে প্রথমে মূত্রনালীতে ইনফেকশন পরবর্তীতে মূত্রথলিতে ইনফেকশন হবে। এই অভ্যাস যদি প্রতিনিয়িত করতে থাকে তাহলে পরবর্তীতে কিডনিতেও আঘাত হানতে পারে। এসব রোগ পুরুষের চেয়ে নারীদেরই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ পুরুষ এখানে সেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারতে পারলেও নারী কিন্তু পারে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি চমৎকার। বিষয়টি সামনে আনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আমি এ বিষয়ে পৌর মেয়রের সাথে কথা বলবো। তাছাড়া মার্কেট মালিকদের নিয়ে আমি সহসাই বসবো এবং বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়