প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারি
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা চিহ্নিত হয়ে গেছে, অচিরেই ব্যবস্থা
চাঁদপুরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির অক্টোবর মাসের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৭ অক্টোবর রোবাবর সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
|আরো খবর
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্ট করা হতো। বর্তমানেও সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাতে কুমিল্লায় একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছিল যার প্রভাব সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও কিছুটা পড়েছিল। কুমিল্লার ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর মধ্যে কুচক্রী মহল খুব চতুরভাবে কাজ করেছে, যারা এদেশে শান্তি ও সম্প্রীতি চায় না। তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি এদেশ শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ। হিন্দু-মুসলমান সবাই আমরা এ দেশেরই নাগরিক। সবারই বাঁচার অধিকার আছে। সুতরাং পূজাম-প যারা ভাংচুর করেছে তাদের পরিচয় কিন্তু আমাদের জানা হয়েছে। অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দেশটা আমাদের। তাই এই দেশ নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা যারা মুসলমান সম্প্রদায় আছি তারা রাসুলের নির্দেশিত পথে চলতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ গোলাম কাউসার হিমেল, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম লিপন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, শাহরাস্তির উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান শেফালি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলমসহ আরো অনেকে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এই সভাটি আমাদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সভার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করতে পারে। অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, অবৈধ এসব যানবাহনের কারণে শহরে প্রতিদিন ভীড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের অবৈধ যানবাহন নিষ্ক্রিয় করতে হবে। সবাই সমন্বিতভাবে এ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সদর উপজেলা ও পৌরসভায় এসব যানবাহন বেশি দেখা যায়। তাই আগে সদর ও পৌরসভা থেকে এ কাজ শুরু করতে হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যে কাজগুলো হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পাশে থেকে সাহায্য করবেন।
তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী করোনা সংক্রমিত হলে তার চিকিৎসা শুধু নয়, সে কার কার সাথে মিশেছিলো তাদেরকেও খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবাইকে সচেতন হতে হবে। শেখ রাসেল দিবসে জেলা প্রশাসনসহ আমরা সবাই পালন করবো। করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে শেখ রাসেল দিবস পালন করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মা ইলিশ রক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, নদীতে কম্বাইন্ড অপারেশন চালাতে হবে। কারণ, জেলেরা হিংসাত্মক আচরণ করছে। আমাদের কেউ মার খেয়ে আসবে আমি তা চাইবো না। তবে জেলেদের যে মারতে হবে তা নয়। তাদের আচরণকে প্রতিহত করে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে আসতে হবে। আমরা জেলেদের উপর অন্যায়, অত্যাচার ও জেল-জুলুম দিতে চাই না। তবে তারা যদি সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মানে তখন তাদেরকে আটক করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করছে গুজব। গুজব ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমাদের সেসব গুজব প্রতিহত করতে হবে এবং সচেতন থাকতে হব। আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমাদের ধর্মের শান্তির বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষকরে তরুণ যুব সমাজকে এ ধরনের গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্যে বলতে হবে। হাজীগঞ্জের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি মহল সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করতে চাইছে। এ ধরনের ঘটনা হঠাৎ করে হয় না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছি কারা এ ধরনের কাজ করেছে। দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই অনাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়েছে। সাধারণ মানুষকে এই দুষ্কৃতকারীদের সস্পর্কে সচেতন করাতে হবে। আমাদের নবীজি কখনো বিধর্মীদের আঘাত করেন নি। আমার তাঁরই অনুসরণ করে চলবো। নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে যে, আমরা যার উম্মত তাঁরই অনুসরণ করবো। হিন্দু সম্প্রদায়কে বলবো, আপনাদের সেফটির জন্যে সেদিন পুলিশ ফায়ার করেছিলো। আপনারা শান্ত হোন। প্রশাসন জনগণের সেবার জন্যে সবসময়েই প্রস্তুত রয়েছে। আপনাদেরও প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে। চাঁদপুরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে।