শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা সম্ভব
বিমল চৌধুরী ॥

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী পূজার দিন রাতের বেলা (গত ১৩ অক্টোবর) কোরআনশরীফ অবমাননার সংবাদের ভিত্তিতে হাজীগঞ্জে ভাংচুরকৃত কয়েকটি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। গতকাল ১৫ অক্টোবর দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হাজীগঞ্জ শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউড় আখড়ার ত্রিনয়নী সংঘ, হাজীগঞ্জ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম পরিদর্শন করেন এবং ঘটে যাওয়া হামলা সম্পর্কে অবহিত হন। নেতৃবৃন্দ কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরও পূর্ব থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের নেতৃত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডঃ সুব্রত রায় চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, অ্যাডঃ শ্যামল কুমার রায় প্রথমে ঘটনাবহুল কুমিল্লায় যান। সেখান থেকে তারা দুপুরে হাজীগঞ্জ শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউড় আখড়ায় আসলে চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী পিপি, সিনিয়র সহ-সভাপতি তপন সরকার, হাজীগঞ্জ উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক স্বপন কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুনসহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ তাঁদেরকে স্বাগত জানান। পরে নেতৃবৃন্দ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমেনা আক্তার, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হারুনুর রশিদসহ জেলা ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

এ সময় নেতৃবৃন্দকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত মিঠুন ভদ্র।

ঘটে যাওয়া ঘটনাকে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা তাদের কঠোর অবস্থানের কথা নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। এ সময় ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশে যে অপশক্তি রয়েছে তার প্রমাণ আমরা বার বার পাচ্ছি। দেশে সন্ত্রাসী শক্তি সক্রিয় রয়েছে এ ঘটনাই তার প্রমাণ। রামু, নাছির নগর, কোটরাবাদ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সকল ঘটনা ঘটছে, তার হয়তো কিছু কিছু বিচার হচ্ছে, কিন্তু আশানুরূপ বিচার হচ্ছে না বলে আমরা মনে করি। এ সকল ঘটনা রোধ করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর এজন্যে প্রয়োজন রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে। এজন্যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি কিছু কিছু রাজনৈতিক দল জামাত-শিবিরকে নিয়ে রাজনিতি করার কারণে। অপশক্তি ও সন্ত্রাসরোধে আমরা এখনো সফল হতে পারিনি। তবে সরকারের প্রশাসন চাইলে নিখুঁতভাবে কিছু করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে সকলের সহযোগিতা করা প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ঘটনাকালীন প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্যে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। জাতির পিতা একটি সুন্দর, সুখী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছেন। অথচ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল একের পর এক আমাদের ওপর নানা কারণ দেখিয়ে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে। তা তো হতে পারে না। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে শনাক্ত পূর্বক বিচারের দাবি করেন।

নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্ত হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ আশ্রমে গেলে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন আশ্রমের অধ্যক্ষ সেবাময়ানন্দজী মহারাজ ও আশ্রম সেক্রেটারী নীহার রঞ্জন হাওলদার। তারা ঘটনার বিবৃতি দিতে গিয়ে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গত ১৩ অক্টোবর রাতে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী পূজার দিন হঠাৎই একদল ধর্মান্ধের মারমুখী হামলায় ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয় হাজীগঞ্জের লক্ষ্মী নারায়ণ জিউড় আখড়ার ত্রিনয়নী সংঘ, রামকৃষ্ণ আশ্রম, নব দুর্গা পূজা মণ্ডপ, জমিদার বাড়ি পূজা মণ্ডপ, দশভূজা পূজা মণ্ডপ, ত্রিশূল সংঘ, বড়কূল সোনাইমুড়ি দুর্গা মন্দির, রামপুর বাজার দুর্গা মন্দির, রাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ি দুর্গা মন্দির, হাজীগঞ্জ নোয়াদ্দা রাধা গোবিন্দ মন্দির, গঙ্গানগর হাটিলা দুর্গা পূজা মণ্ডপ, বড়কুল ভবতোষ সাহা বাড়ি কালী মন্দির, রামপুর পোদ্দার বাড়ি লোকনাথ মন্দির। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের ভূমিকাকে সন্তোষজনক বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ বিচার দাবি করেন। তবে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত হাজীগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা হয়েছে বলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জানান। আরো কয়েকটি মামলা হবে বলেও জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়