প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরে গাইনী চিকিৎসক ডাঃ শামসুন্নাহার তানিয়ার ভুল চিকিৎসায় আর কত নারীকে মৃত্যুবরণ করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাব চায় জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ। তার ভুল চিকিৎসায় আবারো শহরের আল-আমিন হাসপাতালে রাহিমা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
গতকাল ৮ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান অপারেশন করাবস্থায় গৃহবধূর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছে পরিবারের সদস্যরা। তবে মায়ের মৃত্যু হলেও নবজাতক কন্যা শিশুটি সুস্থ রয়েছে।
ঘটনার পর পর নিহতের স্বজনদের চিৎকারে যেনো আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। জড়ো হতে থাকে শত শত উৎসুক জনতা। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক হলে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে জানালে মডেল থানার নির্দেশে নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নিহত রাহিমা বেগম সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকার স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী মনির হোসেনের স্ত্রী।
মনির হোসেন জানান, আমার স্ত্রী রাহিমা প্রায় ২ বছর ধরে ডাঃ শামসুন্নাহার তানিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলো। সেই সূত্র ধরে তার সিজার করার দায়িত্ব ডাঃ তানিয়া নিজেই নেন। তার কথা অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চাঁদপুর আল-আমিন হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ-এ ভর্তি করাই। ৮ অক্টোবর দুপুরে হাসপাতালে সিজারের জন্য রহিমাকে ওটিতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ওটি থেকে কন্যা সন্তান হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে প্রায় ১ ঘন্টা অতিক্রম হয়ে গেলেও আমার স্ত্রী কেমন আছে এবং সুস্থ আছে কি না তা জানতে পারিনি। পরে আমি জোর করে ওটিতে প্রবেশ করি। তখন আমাকে বলা হয় আমার স্ত্রী মারা গেছে। সিজার করে ডাঃ তানিয়া চলে গেলেও হাসপাতালের কেউ মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছু জানায় নি।
গৃহবধূর শাশুড়ি রহিমা বেগম জানান, ডাঃ তানিয়া আমার ছেলের বৌ রাহিমারে মেরে ফেলেছে। সে খুনি। গৃহবধূর পিতা জয়নাল গাজী জানান, ৪ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে মনির হোসেনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষের গাফিলতি ও ডাঃ তানিয়ার ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নতুনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান জানান, ঘটনার অনেক পরে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। আমরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছি। তবে কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ডাঃ শামসুন্নাহার তানিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ডাঃ শামসুন্নাহার তানিয়ার ভুল চিকিৎসায় এ পর্যন্ত বেশক’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। চাঁদপুরের সচেতন নাগরিকগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চান, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা এ চিকিৎসকের হাতে আর কত নারীর মৃত্যু হবে? আর কত নারী ভুল চিকিৎসায় মারা গেলে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে ?
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃত গৃহবধূর লাশ হাসপাতালে রয়েছে এবং হাসপাতাল ও রোগীপক্ষসহ প্রভাবশালী একটি সর্বদলীয় স্বার্থান্বেষী মহল সমঝোতার চেষ্টা করছে বলে জানা যায়।