প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
কচুয়া উপজেলায় ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বার পর অবৈধভাবে গর্ভপাতের অভিযোগে দুই মামাকে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা র্যাব-১১। গ্রেফতারকৃতরা হলো : কচুয়ার জুনাসার গ্রামের শিপন ও তার ভাই মফিজুল। কুমিল্লার মুদাফফরগঞ্জ ও চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-১১ সিপিসি-২-এর কুমিল্লা কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করে এ তথ্য জানান র্যাব কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
র্যাব জানায়, কচুয়ার জুনাসার গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ শিপন হোসেন (১৯) গত বছরের অক্টোবর মাস হতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তার ১৪ বছরের আপন ভাগ্নিকে একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের ফলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি প্রথমে ভিকটিমের মা বুঝতে পেরে তার আপন ভাই কচুয়ার জুনাসার গ্রামের মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মোঃ মফিজুল ইসলাম (৩৫)কে জানালে তিনি বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করেন এবং কাউকে জানালে ভিকটিমের পরিবারকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে দিবে বলেও ভয়-ভীতি দেখান। এরই মধ্যে মোঃ মফিজুল ইসলাম ভিকটিমের পরিবারকে লাকসামে একটি ভাড়া বাড়িতে জোরপূর্বক রেখে আসে এবং সেখানে থাকা অবস্থায় ভিকটিমকে গর্ভপাত করানোর জন্যে জোরপূর্বক ওষুধ সেবন করায়। ওষুধ সেবনের ফলে গত ২৪ মে ভিকটিমের পেটে ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে ভিকটিম একটি মৃত সন্তান প্রসব করে। মৃত সন্তান প্রসব করার পর কোনো ধর্মীয় বিধান অনুসরণ না করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোঃ মফিজ বাচ্চাটিকে দাফন করে। অকাল গর্ভপাত হওয়ার কারণে পরবর্তীতে ভিকটিম মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মা বিষয়টি মফিজুল ইসলামকে জানায় এবং অসুস্থ ভিকটিমকে চিকিৎসা করানোর জন্যে টাকা চায়। মফিজুল ইসলাম ভিকটিমের মাকে কোনো সাহায্য না করে তাদেরকে লাকসামের ভাড়া বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং বিষয়টি কারো কাছে না বলার জন্যে বারবার হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে এবং ধর্ষক মোঃ শিপন হোসেনকে আত্মগোপনে রাখে। এ অবস্থায় ভিকটিমের মা বিষয়টি আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় বিভিন্ন লোকজনকে জানিয়ে সামাজিকভাবে কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত এক সপ্তাহ পূর্বে মোবাইল ফোনে বিষয়টি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ক্যাম্পকে অবহিত করে। তারই প্রেক্ষিতে র্যাব বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১১, সিপিসি-২-এর একটি দল ৭ অক্টোবর রাতে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার মুদাফফরগঞ্জ এবং চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার বানিয়া দিঘিরপাড় এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ধর্ষক শিপন হোসেন ও তার সহযোগী মোঃ মফিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের অপরাধের বিষয়টি স্বীকার করে।
কোম্পানি কমান্ডার, র্যাব-১১ সিপিসি-২ মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত শিপন ও মফিজুল তারা দুজন একে অপরের ভাই। তাদের বাবা ভিন্ন। তবে মা একজন। তিনি বলেন, শিপন এবং ধর্ষিত কিশোরীর মা একই মায়ের সন্তান।
এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।