শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

করোনার প্রকোপে চাঁদপুরে তাদের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়
পাপ্পু মাহমুদ ॥

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সঙ্কটকালে স্বেচ্ছাশ্রম দিলেও প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়োগের কোনোটিতে ডাক পড়েনি চাঁদপুরের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের।

করোনার মহাসঙ্কটকালে স্বেচ্ছায় ঝুঁকিপূর্ণ নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হয়েছেন বঞ্চনার শিকার। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারির সঙ্কটে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন চাঁদপুরের স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। উপজেলাধীন সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ আগের কর্মস্থল থেকে চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু দেশের কয়েক জায়গা থেকে স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রথম দফায় ১৪৫ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৫৭ জন স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয় মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে। কিন্তু এবারও ডাক পড়েনি চাঁদপুরের মেডিক্যাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমাধারী এই স্বেচ্ছাসেবীদের। এতে হতাশায় ভুগছেন তারা।

চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে ২৩ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পদ থাকলেও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। বাকি ১১টি পদ শূন্য থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা এবং বিপাকে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর দায়িত্বশীলরা।

করোনার সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনা পরীক্ষায় শুরু থেকেই নমুনা সংগ্রহে জটিলতা তৈরি হয়। পরে সরকারি ঘোষণা আসার পর সিভিল সার্জনের কার্যালয় চাঁদপুর-এর স্বাক্ষরিত তালিকা অনুসারে ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবক ডিপ্লোমাধারী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের কাজে যোগ দেন। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে।

বিভিন্ন হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা জানান, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন তারা হিমশিম খাচ্ছিল, এ সময় স্বেচ্ছাসেবীরা এগিয়ে এসে করোনার নমুনা সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সরকার এসব স্বেচ্ছাসেবীকে সঠিক মূল্যায়ন করবে বলে তারাও এখনো আশা প্রকাশ করছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ০৭.০৬.২০২০ তারিখে প্রথম স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে যোগদানকারী রূপম চন্দ্র দাস বলেন, করোনাকালীন সঙ্কটময় মুহূর্তে হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনোলজিস্ট করোনায় আক্রান্ত হলে সঙ্কট সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই সময় আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজে যোগদান করি। ফলে আগের কর্মস্থলে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে ও আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখবেন বলে আমরা এখনো বিশ^াস করি।

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নমুনা সংগ্রহের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের তালিকায় চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরিত ২৪ জনের মধ্যে দু-চারজন ব্যতীত বাকি সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন এখনো। কিন্তু মিলেনি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা।

গত ২৩ জুলাই ২০২০ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে অথবা ল্যাবে কর্মরত ৫৭ জনকে যাচাই-বাছাই কমিটির সম্মুখে আগামী ০১.০৯.২০২০ মঙ্গলবার এবং ০২.০৯.২০২০ বুধবার উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলেও চাঁদপুর জেলায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ঠাই হয়নি সে নিয়োগে। তাদের এখন একটাই চাওয়া, সরকার যেন তাদের সুদৃষ্টিতে দেখেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম শোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, করোনা সংকটকালে যেহেতু তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছায় নমুনা সংগ্রহের কাজে এগিয়ে এসেছেন, সেহেতু তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো উপকৃত হবে, পাশাপাশি তারাও উপকৃত হবে।

করোনা সংকটের সময় ডিপ্লোমাধারী যে সকল মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নমুনা সংগ্রহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছে, তাদের নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ থাকবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।

সঙ্কটময় সময়ে সাড়া দেয়া চাঁদপুর জেলার অদম্য এসব করোনাযোদ্ধাকে নিয়োগ দিয়ে স্থায়ী চাকুরি নিশ্চিত করা হবে বলে সরকার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আশাবাদী তারা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়