শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

জেলা আওয়ামী লীগের দিনব্যাপী তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় অভাব-অভিযোগ আর ক্ষোভ প্রকাশ

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নয়, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে : মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি

তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আছেন বলেই আজ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নয়, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে : মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি
বিমল চৌধুরী ॥

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সফর উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে তৃণমূল প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২ অক্টোবর শনিবার সকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিনিধি সভা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। তিনি সকল নেতা-কর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১২ ঘন্টা একনাগারে আপনারা যেভাবে ধৈর্য ধরে সভা সম্পন্ন করার জন্যে অপেক্ষা করেছেন তা বাংলাদেশে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলাকে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা একটু বেশিই ভালোবাসেন। তার প্রমাণ মনে হয় আপনারা পেয়েছেন। যতবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ততোবারই একের অধিক মন্ত্রীত্ব পেয়েছে এই চাঁদপুরবাসী। শেখ হাসিনা ডাঃ দীপু মনির হাত ধরে চাঁদপুরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তার প্রমাণ হিসেবে বলতে চাই চাঁদপুর-হাইমচর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ আরো অনেক কিছুর উন্নয়ন ঘটেছে এই চাঁদপুরে। চাঁদপুরের মানুষ শেখ হাসিনাকে এর প্রতিদান দিবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়ে নেতা-কর্মীরা কাজ করবে এই বিশ^াস আমাদের রয়েছে।

মাহবুব উল হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান শক্তিই হলো তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কারণেই আওয়ামী লীগ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছে। জিয়াউর রহমানের সকল কার্যক্রম ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে, করেছে পুরস্কৃত। তিনি বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করেছেন, করেছেন তার বিচারের পথ রুদ্ধ। জয় বাংলা শ্লোগানকে করেছেন নিষিদ্ধ, যে শ্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে আমার দেশের মুক্তিকামী মানুষ যুদ্ধ করেছিল, স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন পাকিস্তানী ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত করতে। ৭৫’-এর পর কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল তা ভুলে গেলে চলবে না। জননেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিয়াউর রহমান দেশে ফিরতে দেননি। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন কাউন্সিলর হিসেবে দলের নেতা নির্বাচিত হন, তখন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে তাকে দেশে আসার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিল জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, কারো কোটি কোটি টাকা তছরূপ করা আর শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ করা এক কথা নয়। বেগম খালেদা জিয়া তাই করেছেন। তাই প্রচলিত আইনেই বেগম জিয়ার বিচার হবে। তিনি দলের তৃণমূল কর্মীদের সকল মান অভিমান ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নয়, কথা বলতে হবে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমদের সভাপ্রধানে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আছেন বলেই আজ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। আমরা মন্ত্রী, এমপি হতে পেরেছি। আপনাদের আস্থা ভালোবাসায় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাঁদপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পেরেছে। তিনি বলেন, কাজ করলেই ভুল হয়। আর এই ভুল থেকেই আপনাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তবে তা প্রকাশ্যে না এনে সাংগঠনিকভাবেও তা প্রকাশ করা যায়। আপনারা আছেন বলেই আমরা নেতা হতে পেরেছি, দল ক্ষমতায় আসীন হতে পেরেছে। তাই দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে সকল মান-অভিমান ভুলে গিয়ে। আগামী নির্বাচনে আমাদের জয়লাভ করতে হবে। আর এজন্যে আমাদেরকে সকল মান অভিমান ভুলে গিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতে হবে। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্যে রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি।

প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডঃ নূরুল আমিন রুহুল, চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। এছাড়া সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

এদিন সকাল পৌনে ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তৃণমূল প্রতিনিধি সভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শান্তির পায়রাও উড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ। সকাল ১১টায় শুরু হয় তৃণমূল প্রতিনিধি সভার কার্যক্রম। শুরুতে প্রধান বক্তা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আশ^াস দিয়ে বলেন, আজ আপনারা বলবেন, কেন্দ্রীয় নেতারা শুনবেন। তবে এমন কিছু বলবেন না, বা করবেন না যাতে দলীয় নেতৃবৃন্দ বিব্রতবোধ করেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা সাংগঠনিক অনিয়ম থাকলে তা লিখিত আকারে আমাদেরকে দিবেন, আমরা তা সমাধান করতে চেষ্টা করবো। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে কে শুনে কার কথা। তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতার এই আহ্বান মেনে নিতে পারেনি, তারা সাহসে ভর করে দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন ২/১ জন সংসদ সদস্যসহ দলীয় নেতার বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য। তাদের বক্তব্যে দেখা দিয়েছে পক্ষ বিপক্ষে মৃদু উত্তেজনা। অবশ্য তা বড় আকার ধারন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের শক্ত অবস্থানের কারণে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তৃণমূল নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন মান-অভিমান ভুলে গিয়ে জাতীয় নির্বাচনে এক ও অভিন্ন থেকে জননেত্রীর দেয়া প্রতীক নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্যে কাজ করার।

তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মতলব উত্তরের ডাঃ ওয়াদুদ, হাজীগঞ্জের কবির হোসেন মিয়াজী, রাজরাজেশ^র ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, শাহরাস্তির নাসরিন জাহান শেফালী, মোক্তার হোসেন, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান, মতলব দক্ষিণের আল-আমিন ফরাজী, চাঁদপুর সদর উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সাহিদা বেগম, কচুয়া উপজেলার রফিকুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ উপজেলার আলী আহম্মদ পাটওয়ারী, নাজমুল হক পাটওয়ারী, বাগাদী ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেন গাজী, নজরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাহফুজুল হক, ওয়াহিদুর রহমান রানা, মতলব উত্তর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার রেজওয়ানুল করিম, আজমল হোসেন, কচুয়া উপজেলার ইকবাল আজিজ শাহীন, কামরুন নাহার ভূঁইয়া, জিয়াউর রহমান হাতেম, মতলব উত্তরের মোঃ জাহাঙ্গীর, আজমল হোসেন, চাঁদপুর সদরের সাব্বির হোসেন মন্টু দেওয়ান, মোঃ জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, আব্দুস সামাদ টুনু, হাইমচর উপজেলার মোঃ নূর হোসেন পাটওয়ারী, শাহরাস্তি উপজেলার রেজাউল করিম পাটওয়ারী মিন্টু প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়