শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শাহরাস্তি ও মনোহরগঞ্জে মতলব দক্ষিণের ৯টি সংগঠনের ত্রাণ কার্যক্রম

অনলাইন ডেস্ক
শাহরাস্তি ও মনোহরগঞ্জে মতলব দক্ষিণের ৯টি সংগঠনের  ত্রাণ কার্যক্রম

কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুর থেকে আসা প্রবল বন্যার পানি শাহরাস্তিসহ চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলাকে প্লাবিত করেছে। বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটান। অনেক এলাকায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও বন্যার মধ্যে আটকে রয়েছে। তারা ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গৃহপালিত পশু ও কর্মসংস্থান হারিয়ে অসহায় অবস্থায় আছে।

বন্যার ফলে শাহরাস্তি উপজেলায় মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বন্যায় আক্রান্ত প্রায় ১,৬০০ টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে, যা সামাল দেওয়ার জন্যে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৯টি স্থানীয় সংগঠন একযোগে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সংগঠনগুলো হলো : আশার আলো অর্গানাইজেশন, ফ্রেন্ডস জোন সোসাইটি, আমরা মতলবের জনগণ, হিউমিনিটি অর্গানাইজেশন, মানবতার বন্ধন, মতলব বাজ, রক্তকণা ফাউন্ডেশন, ব্যাচ ১৩ এবং অঙ্গীকার বন্ধু।

৫ সেপ্টেম্বর এই সংগঠনগুলো যৌথভাবে শাহরাস্তি এবং লাকসামের মনোহরগঞ্জ অঞ্চলের ২২০টিরও বেশি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। ত্রাণ কার্যক্রমে তারা খাদ্য সামগ্রী, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ এবং শীতবস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছে। এছাড়াও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র ও একটি এতিমখানায় সহায়তা প্রদান করেছে।

ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিলো চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ, সাবান, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে ঔষধ। পাশাপাশি শীতের প্রস্তুতি হিসেবে শীতবস্ত্র ও সাধারণ পোশাক বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্যে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেছে, যারা নৌকা ব্যবহার করে প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে।

আশার আলো অর্গানাইজেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবী শাহরাস্তি থেকে ফিরে বলেন, “অনেকেই ভাবছেন, শহরের পানি কমে যাওয়া মানেই বন্যা শেষ হয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন আর বন্যার খবর তেমন প্রচারিত হচ্ছে না এবং সাহায্যও কমে গেছে। কিন্তু শহরের পানি নেমে গেলেও প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বন্যার প্রকোপ রয়ে গেছে। একটি অঞ্চল বা এক ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে, একসাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।” তিনি আরও জানান, "শহরের আশেপাশে কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছেছে, কিন্তু অনেক দুর্গম অঞ্চলে এখনো একবারের জন্যেও সাহায্য পৌঁছায়নি। এসব অঞ্চলের মানুষজন অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছে। আমরা প্রশাসন, সরকার, সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—এখনই আপনাদের সাহায্য কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এই মুহূর্তে শুকনা খাবারের চেয়ে ভারী খাবারের প্রয়োজন বেশি। অনেকেই তাদের বাড়িঘর, কৃষিজমি ও গৃহপালিত প্রাণী হারিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাও অত্যন্ত জরুরি। আমাদের সকলের দায়িত্ব দুর্গম এলাকাগুলোতে দ্রুততম সময়ে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।”

ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে বন্যার্তরা বলেন, "দীর্ঘ ১১ দিন আমরা পানিবন্দী, শহর থেকে দূরে হওয়ায় অনেকেই এখানে পৌঁছাতে পারছে না। কিছু অঞ্চলে একদিন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে, তবে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা আপনাদের উপহার পেয়ে সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্যে খাবার পেয়ে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি।"

অনেক পরিবার জানান, তারা বন্যার কারণে তাদের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি হারিয়েছে। এখন পুনর্বাসনের জন্যে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত সংগঠনগুলো আগামী দিনগুলোতেও বন্যার্তদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, "এখনো অনেক পরিবার সহায়তার অপেক্ষায় আছে, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে।" এছাড়াও, বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের পরিকল্পনাও করছে এই সংগঠনগুলো, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা পায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়