শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

৫ আগস্ট এবং তার আগে চাঁদপুরে অগ্নিসংযোগ নিয়ে জনপ্রতিক্রিয়া

শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় আগুন দেয়ার জেরেই পরবর্তী আগুনের খেলা

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় আগুন দেয়ার জেরেই পরবর্তী আগুনের খেলা

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চাঁদপুরে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসাবাড়িতে ব্যাপক হারে আগুন দেয়া হয়। কোনো কোনো বাসায় লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে সব ছাই করে দেয়া হয়। কিন্তু কেনো? এই আগুন দেয়ার সংস্কৃতি তো চাঁদপুরে ছিলো না? বড়ো জোর রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষের অফিসে হামলা-ভাংচুর হতো। কিন্তু কারো বাসায় আগুন দেয়ার ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। তাহলে ৫ আগস্ট কেনো নেতাদের বাসায় এভাবে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটলো! এই কেনো'র জবাব খুঁজতে কথা হয় চাঁদপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে।

চাঁদপুরের জনগণের এ বিষয়ে মন্তব্য হলো--৫ আগস্টের আগে দুই দুইবার জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় হামলা হয়েছে, ভাংচুর হয়েছে এবং আগুন দেয়া হয়েছে । বিশেষ করে ৪ আগস্ট রাতে দেয়া আগুনে মানিক সাহেবের বাসার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি তাঁর সখের স্পীডবোটটিও পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর আগে শেখ মানিকের বাসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ১৮ জুলাই রাতে। অগ্নিসংযোগের এই দুই ঘটনার জের ধরেই পরবর্তীতে ৫ আগস্ট বিভিন্ন নেতার বাসায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে বলে জনগণ তাদের মতামতে ব্যক্ত করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ১৮ জুলাই প্রথম চাঁদপুর শহরে বড়ো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটে। এদিন বিকেলের পর থেকে শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। কোটা বিরোধী তথা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের হাজার হাজার শিক্ষার্থী শহরের বাসস্ট্যান্ড এবং চক্ষু হাসপাতাল এলাকা জুড়ে সড়কে অবস্থান নেয়। ওদিকে সরকার দলের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও মাঠে নামে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে। সন্ধ্যা নাগাদ দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগ যুবলীগ পিছু হটে। এই সুযোগে শহরের মিশন রোড এলাকায় অবস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহিরের ব্যবসায়িক অফিস এবং জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ। জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে পতাকা স্ট্যান্ড এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করা হয়। এছাড়া অন্য কিছুর ক্ষতি করতে পারে নি প্রধান ফটক ভেতর থেকে বন্ধ থাকায়।

এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ পুনরায় সংগঠিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর তখনই জেলা বিএনপি অফিস এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় হামলা ও ভাংচুর হয়। মানিকের বাসায় ভাংচুরের ঘণ্টাখানেক পর আবার সে বাসায় হামলা চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল যুবক প্রথমে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে জেলা বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালায়। তারাই এখান থেকে গিয়ে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় ভাংচুর করে। এর ঘণ্টাখানেক পর রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় হামলা চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। বাসার নিচতলার আসবাবপত্রে আগুন দেয়া হয়। অনেক পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। ততক্ষণে নিচতলার অনেক কিছু জ্বলে যায়। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ তো বটেই খোদ আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতা ধিক্কার জানান। তবে এই অগ্নিসংযোগের নিউজ টিভি মিডিয়ায় প্রচার করায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার এক নেতা একজন টিভি মিডিয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করে ধমকিয়েছেন কেনো মানিক সাহেবের বাসায় অগ্নিসংযোগের নিউজ পাঠালো।

পরের ঘটনা ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট রাতে। ৪ আগস্ট সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং সরকার দলের কর্মীদের সাথে দফায় দফায় তুমুল সংঘর্ষ হয়। দুপুরের পর থেকে সরকার দলের কর্মীরা পিছু হটতে থাকে। বিকেলের পর থেকে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিয়ে নেয়। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল এসে তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বাসার নিচতলায় এবং দোতলায় হামলা চালায়। নিচতলায় থাকা কিছু মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং ভবনের কিছু পাইপ ভেঙ্গে ফেলা হয়। দোতলায় খান'স ধাবা নামে একটি রেস্টুরেন্টে ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। এদিন আর ভবনের তৃতীয় তলায় দীপু মনির বাসায় হামলা করা হয় নি। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর আবার সরকার দলের কর্মীরা একত্রিত হয়ে মাঠে নামে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের থেকে একদল সশস্ত্র কর্মী প্রথমে জেলা বিএনপির অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সেই দুর্বৃত্তরাই জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসার গেইট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বাসায় ভাংচুর করে আগুন দেয়। এবারের আগুন ছিলো ব্যাপক। বাসার নিচতলা এবং দোতলায় সব কিছুতে আগুন দেয়া হয়। পুরো মুনিরা ভবন দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। একই সময় আগুন দেয়া হয় ভেতরে থাকা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের একটি স্পীডবোটে। সেটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন দেয়ার ঘণ্টা দেড়েক পার হওয়ার পর পুলিশ পাহারায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

পরদিন ৫ আগস্ট যা ঘটে সব একতরফা। দুপুর আড়াইটায় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার ঘোষণা আসার পর পরই পুরো শহরের চিত্র পাল্টে যায়। একদিকে আনন্দ মিছিল হতে থাকে, আরেকদিকে চলতে থাকে বাসাবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। দিনের বেলায়ই দীপু মনির বাসা ও পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের বাসায় আগুন দেয়া হয়। এ দুটি বাসায় দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। বাসা দুটি আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে যায়। এছাড়া জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতা হাসান ইমাম বাদশা ও রেজওয়ানুর রহমান রিজুর বাসায় এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমানের বাসার নিচতলায় আগুন দেয়া হয়। তবে রোমানের বাসায় হামলা এবং আগুন দেয়ার ঘটনার সময় বিএনপির অনেকেই ও প্রতিবেশীরা বাধা দেন। তাদের বাধা এবং ভূমিকায়ই রোমানের বাসার খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে নি। জনগণ বলছেন, যার বাসাই হোক, কারো বাসায় হামলা-ভাংচুর- লুটপাট-অগ্নিসংযোগের মতো কর্মকাণ্ড কারোরই করা উচিত নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়