মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ঠিকাদারের অভিযোগ : ৫ আগস্ট প্রকল্পের ২০ টন রড ডাকাতি হয়েছে!

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার আইইউজিআই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ

ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ

নুরুল ইসলাম ফরহাদ ॥
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার আইইউজিআই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ

৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর গোটা দেশে বিজয় উল্লাস হয়। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে চলমান উন্নয়ন কাজ কিছুটা থমকে যায়। ফরিদগঞ্জেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ৫ আগস্ট থেকে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ওনুআ চত্বর থেকে এআর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মোড় পর্যন্ত পৌরসভার আইইউজিআই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতার মতো উক্ত কাজের সহযোগী ঠিকাদারও পালিয়ে যান। কারণ তারা রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসাও চালিয়ে যেতেন। তাদের পালিয়ে যাওয়ার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে এ রাস্তা ব্যবহারকারীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

এই কাজের জায়গায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, ড্রেন করার লক্ষ্যে মাটি খনন করা হয়, সেখানে পানি জমে পাশের দোকান এবং ভবনের নিচের মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ড্রেন করার গর্ত বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যাঘাত ঘটায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ড্রেনের পাশের রাস্তাটিতেও গর্ত, পানি আর কাদায় এমন অবস্থা হয়েছে যে, ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও মানুষকে বাধ্য হয়ে রাস্তাটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফরিদগঞ্জ সদর থেকে রূপসা বাজারে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি, তারাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এছাড়া ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের শত শত শিক্ষার্থীকে কাদা মাড়িয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

গত ৩০ জুন ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ওনুআ চত্বর থেকে এআর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মোড় পর্যন্ত আইইউজিআই প্রকল্পের ড্রেনের কাজের উদ্বোধন করা হয়। অতি ধীরে করা ড্রেনের কাজটি কলেজ রোড পর্যন্ত এসেছে। গর্ত করে রাখা হয়েছে লিংক রোডের মাথা পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ২০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। এই প্রকল্পের টাকার অঙ্ক অনেক বড় হলেও কাজের গতি তার বিপরীত গতিতে চলছে। ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে কেউ এগিয়ে আসছেন না।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দোকানের সামনে ড্রেনের জন্যে মাটি খনন করে রাখা হয়েছে। এটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। পানি জমে, ময়লা- আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশার উপদ্রবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতে পারছি না। বেচা-বিক্রি তো লাটে উঠেছে। এক কথায় আমরা ভালো নেই, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।

এই প্রকল্পের সহযোগী ঠিকাদার পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর মেয়ে অ্যাডঃ নাজমুন নাহার অনি বলেন, আমি ইচ্ছে করে কাজ বন্ধ রাখিনি। আমি মানুষকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমিও চাই কাজ চলমান থাকুক। কিন্তু ৫ তারিখের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আমি এখনো স্বাভাবিক হতে পারিনি। ৪ আগস্ট আমি নিজে ১৪ লাখ টাকার রড কিনেছি উক্ত কাজের জন্যে। এর আগে আরো কিছু রড ছিলো। সব মিলিয়ে আমার ২০ টন রড, পাথর এবং ইট কে বা কারা নিয়ে যায়। যার আনুমানিক হবে মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকা। সবার সামনে তারা এই কাজটি করেছে, তাই এটাকে আমি বলবো ডাকাতি।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রশাসকের সাথে আলাপ করে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগামী রোববার /সোমবারের মধ্যে চিঠি দিবো। ওনুআ হতে হাই স্কুল রোড অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আমাদের পরামর্শ থাকবে এই কাজটি দ্রুত শেষ করার। টানা বর্ষণের কারণে কাজ বন্ধ ছিলো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কাজের সাব ঠিকাদার ছিলেন সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী সাহেবের মেয়ে নাজমুন নাহার অনি। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়াতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা ঠিকাদারকে কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্যে বলেছি। ৫ আগস্টের পরই মূলত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে খুব সহসা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা লিখিতভাবে জানাবো। উক্ত কাজের জন্যে আনা ঠিকাদারদের রড ৫ আগস্ট কে বা কারা নিয়ে যাওয়াতে কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে বলে ঠিকাদার জানান।

পৌর প্রশাসক এ. আর. এম. জাহিদ হাসান বলেন, আমি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব পেয়েছি কয়েকদিন হলো। এখনো সব কিছু দেখার সুযোগ হয়নি। আমি অফিসিয়াল নিয়মের মধ্যে চলতে এবং কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করি সময়ের ব্যবধানে সব ঠিক করতে পারবো। আপনি যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সেটা আমি জেনেছি। ঠিকাদারকে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্যে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়