শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

উপেক্ষিত আদালত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও

২৪ বছরের বঞ্চনা ও বৈষম্যের শেষ দেখতে চান শিক্ষক কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
২৪ বছরের বঞ্চনা ও বৈষম্যের শেষ দেখতে চান শিক্ষক কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া

৩১ বছর পূর্বে ছিলেন তরতাজা যুবক। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে মহিলা মাদ্রাসা স্থাপন হবে এলাকায়। নিজের বাড়ি থেকে কাঠ-বাঁশ সংগ্রহ করে দিনরাত কষ্ট করে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গত ২৪ বছর ধরে নিজেই নির্বাসিত। শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মানসে বারংবার প্রতিষ্ঠানে আসতে চাইলে তাকে ষড়যন্ত্র করে ভিড়তে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের ব্যক্তিগত আক্রোশ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি এখনো দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে যোগদান করা থেকে বঞ্চিত করছে।

হতভাগা এই শিক্ষকের নাম কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া। ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লড়ুয়া কেরামতিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক তিনি। টানা তিনদিন ধরে শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠি নিয়ে মাদ্রাসায় যোগদান করার জন্যে গেলেও মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কৌশলে মাদ্রাসা থেকে সটকে পড়ে তাকে বঞ্চিত করছেন।

নিজের ২৪ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ১৯৯৩ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিও ভুক্ত হিসেবে ১১/৭/১৯৯৪ সালে তিনি মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক এবং ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে তিনি বিএড স্কেল প্রাপ্ত হওয়ার পর মাদ্রাসা সুপারের অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের জের ধরে তৎকালীন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। মাদ্রাসা সুপার নিজের কুকর্ম ঢাকতে স্থানীয় কমিটি গঠন করে ১/১/২০০২ সাল থেকে তার বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে তাকে অসম্মানিত করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে চেষ্টা তদবির চললেও তাকে কোনোভাবেই মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকতা করতে এবং হাজিরা খাতায় সই দিতে দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময়ে অর্থাৎ ৩০/৪/২০০৮ সালে প্রথমে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। প্রতিকার না পেয়ে তিনি চাঁদপুর দেওয়ানি আদালতে (১১/২০১০) মামলা দায়ের করেন।

আদালত তাকে বেতনভাতাদিসহ স্বপদে বহাল করার নির্দেশনা দেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত দেওয়ানি আপিল (৫/২০১৬) করলেও আদালত পূর্বের রায় বহাল রেখে আপিল (২৮/৩/২০১৯) খারিজ করে দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই সময়ের মাদ্রাসা সুপার আঃ কাদের মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে সিভিল রিভিশন নং-৩০৯৪ /২০১৯ দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগও ৩০/৯/২০২১ তারিখে প্রদত্ত রায়ে পূর্বের রায় বহাল অর্থাৎ কাউছার আহমেদ ভূঁইয়াকে স্বপদে বহাল রাখার বিষয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এর মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করলেও আদালত ২০২২ সালের ২১ মার্চ নো অর্ডার দিয়ে আগের রায় বহাল রাখেন।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আইন শাখা-১ (স্মারক নং- ৫৭.০০.০০০০.০৪৬.০২.০০৩.২২.১৪৫)-এর মাধ্যমে ১৫দিনের মধ্যে ডিজি ডিএমই’র মতামত প্রদানের জন্যে বলা হয়। কিন্তু সেই মতামত দিতে ২ বছর সময় নেয় কর্তৃপক্ষ। অবশেষে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের শিক্ষা শাখা চলতি বছরের ২৫ জুলাই প্রদান করা চিঠিতে তাকে যোগদান করার বিষয়ে মাদ্রাসা সুপারকে নির্দেশনা দেয়।

কাউছার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে যোগদান করতে বাধা প্রদান করে এবং উল্টো তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর তিনি পুনরায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অডিট ও আইন শাখা গত ১৩ আগস্ট চিঠির (স্মারক নং- ৫৭.২৫.০০০০.০০৫.১২.০৬৮.২৩) মাধ্যমে তাকে আবারো মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্যে মাদ্রাসা সুপারকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন মাদ্রাসায় যোগদানপত্র নিয়ে গেলেও মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ফয়েজ বক্স অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে মাদ্রাসা থেকে সটকে পড়েন।

মাদ্রাসায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারকে না পেলেও সিনিয়র শিক্ষক জয়নাল আবেদিন জানান, অসুস্থতার কারণে সুপার মাদ্রাসায় নেই।

ফজলুর রহমান নামে আরেক সিনিয়র শিক্ষক জানান, তার সাথে একসাথেই কাউছার আহমেদ এই মাদ্রাসায় যোগদান করেন। এরপর ঝামেলা হলে তিনি আর আসেন নি। পরবর্তীতে তিনি আদালত ও মাদ্রাসা অধিদপ্তর থেকে পুনর্বহালের নির্দেশনা পেয়েছেন বলে শুনেছেন।

হাসান ভূঁইয়া নামে স্থানীয় একজন বলেন, কাউছার আহমেদের মতো মেধাবী শিক্ষককে এতো বছর বঞ্চিত করা উচিত হয়নি। আদালতের নির্দেশও তারা মানছেন না।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ফয়েজ বক্সকে বেশ কয়েকবার মুঠোফোন কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়