চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে প্রস্তুতকৃত ৩২ কিলোমিটার লম্বা ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা নষ্ট করায় এর ক্ষতিপূরণ ও আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ফ্রান্স প্রবাসী আলী নাজির মিজির পক্ষে তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার। এছাড়া তিনি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এ সংবাদ সম্মেলনে। গতকাল রোববার চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আলী নাজির মিজির পক্ষে তার স্ত্রী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে আলী নাজির উল্লেখ করেন, ফ্রান্সের বিজয় দিবসে ফ্রান্সের সরকারকে উপহার দেয়ার জন্যে আমি ও আমার পরিবার বাংলাদেশে ৩২ কিলোমিটার লম্বা এবং ৪৫ মণ ওজনের ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু পতাকাটি ফ্রান্সে প্রদান করবো, সেহেতু স্থানীয় এলাকার মানুষকে দেখানোর জন্য তাৎক্ষণিক তৈরিকৃত ১৪ কিলোমিটার পতাকাটি ২০১৮ সালে ১ মার্চ স্থানীয় পল্লীমঙ্গল হাইস্কুলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর উপস্থিতিতে প্রদর্শন করি। ঐ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ১ হাজার পতাকা তৈরি করে স্থানীয় জনসাধারণকে উপহার দেয়া হয়। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর লম্বায় ৩২ কিলোমিটার ফ্রান্স পতাকা তৈরির কাজ শেষ হয়।

এদিকে ওইদিনই স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলমগীর আমাদের পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। যদি টাকা না দেই, তাহলে তৈরিকৃত পতাকা বাড়িতে এসে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেয়। এর পর দিন অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর ২০২০ তারিখে আমি ও আমার পরিবার টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্থানীয় মেম্বার আলমগীরসহ কিছু সন্ত্রাসী আমাদের বাড়ি এসে সবকিছু ভাংচুর করে এবং আমার স্ত্রী রোজিনাকে মারধর করে। এরই প্রেক্ষিতে আমি তৎকালীন পুলিশ সুপার ও সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিনকে বিষয়টি অবহিত করি। পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর ওসির পরামর্শক্রমে থানায় এসে চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের ২টি মামলা করে আমার স্ত্রী। মামলার পরপরই ওসি আমাদের থানায় রেখে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান।

তিনি গিয়ে দেখেন স্থানীয় মেম্বার ও তার লোকজন টুকরো টুকরো করে ফ্রান্সের পতাকাটি কাটছেন। তখন আমার স্ত্রীর ছোটভাই রিয়াদ গাজী এতে বাধা দিলে ওসি উল্টো আমার স্ত্রীর ছোট ভাই রিয়াদকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে আসে এবং আমার শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে মোবাইলগুলো জব্দ করে নিয়ে আসে।

এদিকে আমার আত্মীয়-স্বজন টুকরো টুকরো করা পতাকাটি কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আমার পরিবার টুকরো টুকরো পড়ে থাকা পতাকাটি সেলাইয়ের জন্য ২টি হাইপাওয়ার সেলাই মেশিন কিনে পতাকাটি সেলাইয়ের চেষ্টা করি। ঐদিনই ওসি নাসিম উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নতুন কেনা হাইপাওয়ার সেলাই মেশিন ও পতাকা জব্দ করে নিয়ে আসে।

এদিকে এসব ঘটনায় আমরা মডেল থানায় যে দুটি মামলা করেছি, পরবর্তী এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে ২৮ মার্চ ২০২১ তারিখে আমরা স্থানীয় মেম্বার আলমগীর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদপুর জজকোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করি। মামলা করায় মেম্বার আলমগীর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার শ^শুর খোকন গাজীকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ২ মে ২০২১ তারিখে আরো একটি মামলা করি।

৭ জুন ২০২১-এ আমাদের তৈরিকৃত ফ্রান্সের পতাকার জন্য ৮০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে আরেকটি মামলা দায়ের করি। এছাড়া ১৬ জুন ২০২১ তারিখে ৪র্থ মামলা করি। যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, স্থানীয় মেম্বার ও তার সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে আমাদের পরিবারের সবাইকে চাইনিজ কুড়াল ও রড দিয়ে মারধর করে। এতে আমার শ্বশুর, শাশুড়ি, শালা-শালী সবাই প্রচুর রক্তাক্ত আহত হয়।

ঐদিনই অর্থাৎ ১৬ জুন ২০২১ আমাদের করা মামলার আসামী স্থানীয় মেম্বার আলমগীর ও তার সঙ্গীরা আমার স্ত্রী ও পরিবারের সবাইকে আসামী করে একটি এফআইআর করে তা আদালতে জমা দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ঐ দিন থেকেই আমার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৬ জন পলাতক।

সাংবাদিক সম্মেলনে ফ্রান্স প্রবাসী আলী নাজির মিজির পক্ষে তার স্ত্রী রোজিনা বলেন, আমরা দেশের সম্মান রক্ষার্থে এখন পর্যন্ত বিষয়টি ফ্রান্সের সরকারকে অবহিত করিনি। যদি উপর্যুক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে বিষয়টি ফ্রান্সের সরকার, ফ্রান্সের জনগণ এবং ফ্রান্সের আদালতে অবহিত করবো। এতে যদি ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করে, তাতে আমি, আমার পরিবার কেউ দায়ভার গ্রহণ করবো না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশাসহ সিনিয়র সাংবাদিক ও স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকগণ।