প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
হাজীগঞ্জে দাদি-নাতি খুন ॥ নাতনির অবস্থা সংকটাপন্ন
রেমালের প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বসতঘরে ঢুকে দাদি-নাতিকে কুপিয়ে খুন করেছে। একই ঘটনায় নাতনিকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরে আশেপাশের লোকজন ঘরে ঢুকে দাদি হামিদুন্নেছা (৭০), নাতি আরাফাত (১২) ও নাতনি হালিমা (১৫)কে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পায়। তবে লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই প্রাণ হারান দাদি। হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রাণ হারান নাতি।
এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ সুপার ও পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত দাদি-নাতি খুনের ঘটনাটি পারিবারিক সমস্যা থেকে ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে নাতনি হালিমার (১৫) শরীরে একাধিক স্থানে অপারেশন চলছে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে।
গত ২৭ মে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হত্যাকাণ্ড ঘটে হাজীগঞ্জে বাকিলা ইউনিয়ন পশ্চিম রাধাসার বকাউল বাড়িতে। হত্যার শিকার হামিদুন্নেছা ওই বাড়ির সিরাজ বকাউলের স্ত্রী। নিহত আরাফাত ও আহত হালিমা ওই বাড়ির প্রবাসী ইউসুফের সন্তান। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং হালিমা একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিহত হামিদুন্নেছা বেগম প্রবাসী ইউসুফের মা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হামিদুন্নেছার তিন ছেলের সবাই প্রবাসী। তিন ছেলের তিনটি বিল্ডিং। তিন বউ তিন বিল্ডিং আলাদা বসবাস করে। হামিদুন্নেছা ছেলেদের বিল্ডিংয়ে না থেকে স্বামীর রেখে যাওযা চৌচালা টিনের ঘরে থাকতেন। এই টিনের ঘরের সামনে একচালা টিনশেড করে বারান্দা বের করা রয়েছে। এই বারান্দার পূর্ব পাশের দরজা ভেঙ্গে দুর্বৃৃত্তরা ঘরে প্রবেশ করে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হামিদুন্নেছার ছেলে ইউসুফের ৪ সন্তানের মধ্যে বড় দুই সন্তান হালিমা (মারাত্মক আহত) ও আরাফাত (খুনের শিকার) দীর্ঘদিন দাদির সাথে টিনের ঘরে থাকতেন। ইউসুফের স্ত্রী শাহিন বেগম, ছোট দুই সন্তান রবিউন (৮) ও হাবিব (৬)কে নিয়ে বিল্ডিং থাকতেন। মূলত চৌচালা এই ঘরে ঘটে হত্যাকাণ্ডটি।
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে হামিদুন্নেছার প্রতিবেশী পাশের খান বাড়ির ইউসুফ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত আরাফাতের মা শাহিন আমাকে কল দিয়ে তাদের বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছে, অনেককে কুপিয়েছে বলে জানায়। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে বকাউল বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে আমিসহ কয়েকজন ওই বাড়িতে যাই।
তিনি আরো বলেন, ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি প্রবাসী ইউসুফের মায়ের মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে আছে। নাতি আরাফাত ও নাতনি হালিমা নিচের ফ্লোরে আহত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে মসজিদের ইমাম ও অন্যদের সহযোগিতায় আহতদের কাঁধে করে রাস্তায় আনি। পাশের বাড়ি থেকে অটোরিকশা ডেকে এনে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। হাসপাতাল এলে ডাক্তার আরাফাতকে মৃত ঘোষণা করেন এবং হালিমাকে কুমিল্লায় রেফার করেন। পরে শুনেছি সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হালিমাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। তার পিঠে ও বুকে কোপানো হয়েছে।
আহতদের বহনকারী অটোচালক জহির জানান, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার পরে হবে। আমার বাড়িতে আহত আরাফাত ও তার বোন হালিমাকে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে আমার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে তাদেরকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
খোঁজ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল আলম অরুণ ও পুলিশ সূত্র জানায়, খুনের শিকার হামিদুন্নেছার এক মেয়ে রহিমা। এই রহিমার এক মেয়ে তাসলিমা। তাসলিমাকে কয়েক বছর আগে বিয়ে দেয়া হয় একই গ্রামের রাধাসার মেহের আলী হাজী বাড়ির প্রবাসী মিলনের কাছে। মিলন ও তার পরিবার তাসলিমাকে নির্যাতন করার কারণে তার মামারা (হামিদুন্নেছার ছেলেরা) তালাক করিয়ে নিয়ে আসে। পরে তাসলিমাকে ফের ঢাকায় বিয়ে দেয়া হয়। ঢাকার সেই পরিবারের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাসলিমার সাবেক স্বামী ও দেবর আলম বিভিন্ন বাজে কথা বলে তাসলিমার ঢাকার সংসারটি ভেঙ্গে দেয়। সম্প্রতি তাসলিমার প্রথম স্বামীর ভাই আলম তাসলিমার মামার বাড়িতে এসে হামিদুন্নেছাকে কড়াভাবে শাসিয়ে যায়। সেই শাসানোর ফলই সোমবারের রাতের ঘটনার বহিঃপ্রকাশ বলে সন্দেহ করেছেন অনেকে। এমন কথা বলেছেন রাধাসার গ্রামের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য লুৎফা বেগমও।
স্থানীয়রা জানান, বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৩টি বিল্ডিং রেখে কেন ডাকাত দল টিনের ঘরে ঢুকলো? ডাকাত দল ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই ঘরে প্রবেশ করলে ঘর থেকে কোনো স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত বৃদ্ধ হামিদা বেগমের গলায়ও স্বর্ণের চেইন ও কানে স্বর্ণের দুল আছে। হামিদুন্নেছাকে জবাই করা হয়েছে আর আরাফাতের গলায় কাটা দাগ রয়েছে।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, দাদি ও নাতির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিকভাবে ডাকাতি বলে জানাজানি হলেও বিষয়টি পারিবারিক সমস্যাার জেরে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।