বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০

ঘূর্ণিঝড় রেমাল

চাঁদপুরে ১৬ ঘন্টায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি ॥ বইছে তীব্র ঝোড়ো বাতাস ভারি বৃষ্টি

দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় পুরো জেলা অন্ধকারে

মিজানুর রহমান ॥
চাঁদপুরে ১৬ ঘন্টায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি ॥ বইছে তীব্র ঝোড়ো বাতাস ভারি বৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চাঁদপুরে গতকাল ২৬ মে সোমবার ভোররাত থেকেই শুরু হয়েছে ঝোড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টি। একটানা চলা এই বৃষ্টি কখনো বাড়ছে, কখনো কিছুটা কমছে। সঙ্গে রয়েছে ঝোড়ো বাতাস। তবে সকাল ১১টায় পর বাতাস এবং বৃষ্টি উভয়ই কমে যায়। কিন্তু দুপুর ১টার পর থেকে আবার শুরু হয়ে যায় তীব্র ঝোড়ো বাতাস। সেই সাথে বৃষ্টি। বিকেল থেকে বাতাসের গতিবেগ আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। বৃষ্টিও বেড়ে যায়। ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হতে থাকে। ভোর ৪টা ২০ মিনিট থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। এরপর দুপুর ১টার পর থেকে বৃষ্টি বেড়ে যায়। সোমবার ভোর ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। বাতাসের গতি রয়েছে ঘন্টায় ৬৪ কিলোমিটার। গত দুদিন যাবৎ চাঁদপুর-ঢাকা ও বিভিন্ন রুটের লঞ্চসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অন্ধকারে এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা যায়। রোববার রাতে পল্লীবিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলো। আর গতকাল সকাল ১১টার পর চাঁদপুর শহরে পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। মোবাইল ফোন চার্জ দিতে না পারায় অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চাঁদপুরের মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে পড়েছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধসহ নদীর পাড়ে। দুপুর ১টার পর রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একটু পরপর দমকা হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। অফিস আদালত ব্যাংক বীমা খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। বিকেলে শহরের রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য অবস্থায় দেখা গেছে। দোকান, মার্কেট ও বিপণীবিতান সব বন্ধ ছিলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ২৭ মে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুরে। এরপর দুপুর ১টার পর থেকে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। বিকেল থেকে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। সেই সাথে তীব্র বেগে ঝোড়ো হাওয়া। রাত ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল অবশ্য দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২৭ মে বেলা ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে দেয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতও প্রত্যাহার করা হয়েছে। চার বন্দরেই ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রেমাল দুর্বল হলেও বৃষ্টির কোনো কমতি নেই। শুধু চাঁদপুর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বৃষ্টি হচ্ছে।

২৭ মে সোমবার তীব্র ঝড় বৃষ্টির কারণে বন্ধ রয়েছে চাঁদপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহরের লঞ্চঘাটের প্রবেশ এলাকা মাদ্রাসা রোডে বাতাসে গাছ উল্টে সড়কে পড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলোতে যানবাহন সংখ্যা খুবই কম। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এছাড়া মেঘনার পশ্চিমাঞ্চলে চরাঞ্চলের সড়ক ও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর চর বেষ্টিত দুর্গম এলাকা হাইমচরের ঈশানবালা, মাঝেরচর, চর মনিপুর, বাখরপুর, ইব্রাহিমপুর, রাজরাজেশ্বর ও মতলবের জহিরাবাদ, ফরাজীকান্দি বোরোচর এলাকার কাঁচা রাস্তা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে, ঝোড়ো বাতাসে বহু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মেঘনার চরাঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর ইউপি চেয়ারম্যানগণ জানিয়েছেন। বিআইডাব্লিউটিসি চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাটের ম্যানেজার (বাণিজ্য) ফয়সাল চৌধুরী জানান, ২৬ মে রোববার বিকেল ৫টা থেকে চাঁদপুর-শরীয়তপুর রূটের ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। উভয় পাড়ে প্রায় ৬০টি গাড়ি রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।

চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মোঃ শোয়াইব জানান, ভোর ৪টা ২০ মিনিট থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বাতাসের গতি রয়েছে ৬৪ কিলোমিটার। যেহেতু বাতাসের গতি ও বৃষ্টি অব্যাহত, সে কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরো বাড়বে। চাঁদপুরকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ২৫ মে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর চাঁদপুর থেকে লঞ্চসহ সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। নৌ-বন্দর এলাকার জেলে নৌকা, লাইটার জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়