বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০

ঘুর্ণিঝড় রেমাল : মেঘনা-ডাকাতিয়ার পানি জোয়ারে বৃদ্ধি

৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় চাঁদপুর

লঞ্চ চলাচল বন্ধ, সতর্ক অবস্থানে জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি

মিজানুর রহমান ॥
৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় চাঁদপুর

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ায় উপকূলীয় জেলা হিসেবে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে চাঁদপুর। ২৬ মে রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সর্বশেষ এই সতর্কতা সিগন্যাল জারির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর কারণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদীতে আগের চেয়ে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এমনটি হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়। এরই মধ্যে সারাদিনই থেমে থেমে দমকা বাতাসসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে এবং মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে পড়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুটে লঞ্চসহ সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৫ মে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

২৬ মে রোববার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর নদী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত চাঁদপুর-ঢাকাসহ সব নৌরুটে লঞ্চ এবং নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তাছাড়া নৌযান শ্রমিকদেরকে সরকারি নির্দেশনা মেনে নিরাপদে যাতায়াত করাসহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্যে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে রোববার দুপুরে সরজমিন চাঁদপুর লঞ্চঘাটে এসে দেখা গেছে কোনো ধরনের নৌযানের অবস্থান নেই। লঞ্চঘাটের পন্টুন গেট বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তবে চাঁদপুর-ঢাকা রুটের কয়েকটি লঞ্চ ও চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা রুটে চলাচলকারী লাইটার জাহাজগুলো নদী তীরবর্তী এলাকায় নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে পানি এবং বাতাসের তীব্রতা সন্ধ্যা থেকেই বেড়েছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে পৃথকভাবে জেলা পুলিশ ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকেও আবহাওয়া দপ্তরের জারি করা সর্বশেষ আবহাওয়া সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জনগণকে অবহিত করে মাইকিং করা হয়েছে শহরে।

এদিকে উপকূলীয় অঞ্চলের আওতাভুক্ত জেলা চাঁদপুর হওয়ায় আবহাওয়া পূর্বাভাসের ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। চাঁদপুরে ৩৫৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা জানান, জেলার চরাঞ্চলে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর উপজেলার দুটি করে মোট ছয়টি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ইউনিয়নে বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সতর্কতার জন্যে মাইকিং করা হবে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদে থাকতে বলা রয়েছে।

অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর সর্বশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি বৈঠক করেছে চাঁদপুর জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবেলায় চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল জুম সভার আয়োজন করা হয়। জানা যায়, উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পর এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রাত ৯/১০টা নাগাদ এর মূল অংশ অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, রেমাল মাঝারি ধরনের একটি ঘূর্ণিঝড়। এটি মোংলার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড হয়ে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম অব্যাহত থাকবে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের ১৬ জেলা এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের সব বিভাগেই দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়