বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

দারিদ্র্যের কারণে কাঠমিস্ত্রী দম্পতির নবজাতক বিক্রি!

কামরুজ্জামান টুটুল ॥
দারিদ্র্যের কারণে কাঠমিস্ত্রী দম্পতির নবজাতক বিক্রি!

দিনমজুর কাঠমিস্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্তান বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। ওমর ফারুক নামের এই নবজাতককে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় নতুন মায়ের কোলে তুলে দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের বেতিয়াপাড়া গ্রামের কৈয়ারপুল সংলগ্ন তালুকদার বাড়ির। তবে নবজাতক ওমর ফারুকের বাবা কাঠমিস্ত্রী মোঃ সেলিম তার স্ত্রী মৌসুমীর উপস্থিতিতে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিক্রি নয় আমার জেষ্ঠস (স্ত্রীর বড় বোন) নিঃসন্তান হওয়ার কারণে তাকে আমরা স্ট্যাম্প করে পালক (দত্তক) দিয়েছি। শিশুটি এই দম্পতির তৃতীয় সন্তান।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, তারা দারিদ্র্যের কারণে সচ্ছলতার সাথে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না। এমনকি তাদের বসত ঘরটি একটি রুমের টিনের ঘর। টাকার অভাবে স্ত্রী মৌসুমীর চিকিৎসা করতে পারছেন না। যার কারণে নবজাতককে নিকটাত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

সরজমিনে সোমবার (১৫ এপ্রিল দুপুরে) সেলিম মিয়ার বেড়াহীন ঘরের অংশে বসে কথা হলে সেলিম মিয়া জানান, তার ৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে ও ৩ বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। গত ৩০ মার্চ বিকেলে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন স্ত্রী মৌসুমী বেগম। সিজারের ক্ষত এখনো শুকায়নি বলে স্ত্রী অনেক অসুস্থ। ঔষধ কিনতে পারছেন না টাকার অভাবে। এখনও বিছনায় শয্যাশায়ী মৌসুমী। বাকিলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শাহনেওয়াজ আপাকে ফোন দিয়েছিলাম, এখন কী করবো ? কিন্তু তিনি কোনো কিছু না বলে ফোন কেটে দেন।

অপর এক প্রশ্নে মোঃ সেলিম মিয়া জানান, গত পরশু (১২ এপ্রিল) জেষ্ঠস এসে ওমর ফারুককে কচুয়াতে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তিনি আরো জানান, ১৪ বছর পূর্বে তাঁর জেষ্ঠস (স্ত্রীর বড় বোন) ফাতেমা বেগমের বিয়ে হয়েছে। তাদের কোনো সন্তান না হওয়ার কারণে সংসারে অনেক কথা শুনতে হয় তাকে। যার কারণে তাদের দ্বিতীয় সন্তানকে ফাতেমা বেগম দত্তক নিতে চেয়েছেন। কিন্তু তারা দেননি। তৃতীয় সন্তানের জন্মের দিন ফাতেমা বেগম আবারও তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। যার ফলে মানবিক কারণে এবং আত্মীয়তার বিষয়টি বিবেচনা করে সদ্য নেওয়া নবজাতককে দত্তক দেন।

সন্তান বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে মোঃ সেলিম বলেন, আমরা পালক (দত্তক) দিয়েছি, তারা (ফাতেমা বেগম) টাকা দিতে চেয়েছেন, আত্মীয়তার কারণে আমরা নেইনি। তবে স্ট্যাম্পের মাধ্যকে ছেলেকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। স্ট্যাম্প এখনো রেডি করা হয়নি, এক আত্মীয়কে লিখতে দেওয়া হয়েছে।

দেশের আইন অনুযায়ী স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর করা অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে শিশু দত্তক নেওয়ার আইনগত কোনো বৈধতা নেই। কোনো শিশুকে দত্তক নিতে হলে ওই শিশুর বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের অধীনে বৈধ অভিভাবকত্বের জন্যে পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।

এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রোটাঃ ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, নবজাতক বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরেছি। ইতঃমধ্যে আমি ঐ বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, দত্তকের আইনগত বৈধতা রয়েছে। তবে যথাযথ নিয়মের মাধ্যমে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটে এবং অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে তাহলে বিষয়টি দেখা হবে। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়