প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২১, ০০:০০
হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কের হাজীগঞ্জ-কচুয়া অংশে অতিরিক্ত বাঁক আর এ অংশে অতিরিক্ত গতি নিয়ে গাড়ি চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এই সকল দুর্ঘটনার কারণে যাত্রী সাধারণের মৃত্যু আর পঙ্গুত্বের পরিমাণ নেহাৎ কম নয়। প্রায় দিনই মুখোমুখি সংঘর্ষ, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে কিংবা পুকুরে পড়ে যাওয়া কিংবা পথচারীকে চাপা দেয়ার ঘটনা এই সড়কে ঘটেই চলছে। উক্ত সড়কের শুধু হাজীগঞ্জ অংশে ৩০ দিনে কমপক্ষে ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটে বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটু। তবে সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ করা ছাড়া প্রাথমিকভাবে নতুন চিন্তা নেই হাজীগঞ্জ উপ-সড়ক বিভাগের।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কটি সংস্কার ও বাঁক সরলীকরণ করা হয়। যার কারণে নোয়াখালী জেলার একাংশ মিলিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, রামগঞ্জসহ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, কচুয়া, ফরিদগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো অঞ্চলে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুরের ৩২ কিলোমিটার চাঁদপুর সড়ক বিভাগের আওতায় থাকলেও হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে, বাকি ৮ কিলোমিটার ম্যান্টেনেন্সের কাজ করে সড়কে যান চলাচল ঠিক রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর উক্ত সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। বিশেষ করে এই সড়ক ধরে হাজীগঞ্জ-ঢাকা রুটে বিআরটিসি বাসসহ বেসরকারি বেশ ক’টি গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। এ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকাগামী বিটিআরসি বাস, রামগঞ্জ থেকে আল আরাফাহ মিলিয়ে বেশ ক’টি রূটের বাস চলাচল করছে। এছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক মাইক্রোবাসসহ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এমনকি হাজীগঞ্জ থেকে কমপক্ষে অর্ধশত বালুবাহী ট্রাক কচুয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। স্থানীয়ভাবে সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকের চলাচল তো আছেই। উক্ত সড়কের হাজীগঞ্জ অংশ ভালো থাকার কারণে উপরোক্ত সকল পরিবহন বেপরোয়া হয়ে পড়ে, সেই সাথে অতিরিক্ত বাঁকের কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হলেও যথার্থভাবে না করায় অনেকে সেটিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখছে।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়কটিতে কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের নিলাম পাড়া ব্রীজ, দিঘির পাড়, তেতিয়া গাছা ব্রীজ, ডুমুরিয়া গাউছিয়া ছোবহানিয়া আলীম মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা, কালচোঁ বাজারের কালভার্ট মোড় ও কালচোঁবাজার এলাকা, হাজীগঞ্জ উপজেলার পাতানিশ বারেকের ব্রীজ, পাতানিশ বাজার ও কাঁঠালি বাজার সংলগ্ন এলাকা, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বদরপুর ও হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কাজীরগাঁও ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে সবচে’ বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
কালচোঁ বাজারের ব্যবসায়ী (সুলতান স্টোরের মালিক) ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা দিদার হোসেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার পাতানিশ গ্রামের সালেহা বেগম ও পৌরসভাধীন বদরপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, প্রায় দিনই দুর্ঘটনার খবর পাই কিংবা কিছু কিছু দুর্ঘটনার আমরা নিজেরা প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাই।
এ সকল স্থানীয়রা জানান, যেসব স্থানে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে সেই স্থানগুলোতে গতিরোধক, সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড, সড়কের দুপাশে বিশেষ করে বাঁকের ঝোঁপঝাড়গুলো পরিষ্কার করে রাখলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কচুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, কচুয়া থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত উক্ত সড়কে সপ্তাহে ৪/৫ টা দুর্ঘটনা ঘটেই ঘটে। মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতি নিয়ে গাড়ি চলাচল, আর বেশি বাঁকের কারণে।
হাজীগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সওজ) আতাউর রহমান বলেন, আমরা হাজীগঞ্জের ৬ কিলোমিটার কাজ করে ফেলেছি। এখন বরাদ্দ এলে কচুয়া এলাকার ৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ করলে আশা করি এ সড়কে আর কাজ থাকবে না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল্লাহ্ ভূঞা মুঠোফোনে জানান, হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কে কোনো সমস্যা নেই এবং বিভিন্ন স্থানে সাইন সিগনালও রয়েছে। আমাদের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটারের কাজ বাকি আছে। বর্তমানে এই ৮ কিলোমিটার ম্যান্টেনেন্সের মাধ্যমে ঠিক রাখা হচ্ছে।