প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হুমকির মুখে হাজীগঞ্জ বিএডিসির স্কীম ॥ দেদারছে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর প্রকল্পাধীন সোলার সিস্টেম পদ্ধতিতে ধান চাষের কৃষি জমির টপ সয়েল ভেকু দিয়ে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি আশেপাশের এলাকায় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একজনের পাশাপাশি আরেকজন টপ সয়েল বিক্রি করার কারণে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রকল্পটি। ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া মাঠে গিয়ে এমন বাস্তবতার দেখা মিলেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া কৃষি মাঠ ও কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সিদলা কৃষি মাঠের পাশাপাশি অবস্থান। ফুলছোঁয়া মাঠে বিএডিসির কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘সোলার এলএলপি সেচ স্কীম’ নামক ৩টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। ওই মাঠের একটি জমি থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। আর এসব মাটি আশেপাশের গ্রামে ট্রাকে করে বিক্রি হচ্ছে। যা দিয়ে নতুন বাড়ি বাঁধাই, জলাশয় ভরাটসহ ব্যক্তিগত রাস্তাঘাট তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া একই মাঠে কয়েক মাস পূর্বে একটি কৃষিজমির মাটি কেটে একাংশ ভরাট করে ভিটে ও পুকুর করা হয়েছে। বছরখানেক পূর্বে প্রায় ৫০ শতাংশের একটি জমির চারপাশ বাঁধ দিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। আর উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে আশপাশের এলাকার কয়েকটি জলাশয় ও খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাসসহ কমে আসছে কৃষি জমি।
কৃষি জমির পাশাপাশি মাটি পরিবহনে ভেকু পিকআপ ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, আইন অমান্য করে আবাদি জমির উপরিভাগের টপ সয়েল (উর্বর মাটি) বিক্রি হওয়ায় জমির খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাস (জৈব কণা) সমৃদ্ধ মাটির ঘাটতি হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হবে না।
ফুলছোঁয়া মাঠের কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বাকিলার খলাপড়া গ্রামের ফয়সালসহ ক’জন মিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফুলছোঁয়া, সিদলা মাঠের মাটি ও বালু ক্রয়-বিক্রয় এবং ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি ও বালুর উত্তোলনের ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে ফয়সালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, আপনারা নজু ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। পরে নজরুল ইসলামকে একাধিক বার কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
বিএডিসি প্রকল্পের ফুলছোঁয়া স্কীমের সভাপতি জহির ক্বারী জানান, যারা মাটি বিক্রি করে এবং ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার দোষ পড়বে। তাই আমি কিছু বলিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মামুন স্যারকে দুইবার কল দিয়েছি। তিনি কল ধরেননি, ব্যাকও করেননি।
এ ব্যাপারে বিএডিসির হাজীগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মোঃ মামুন রশিদকে কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য ও নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, মাটিকাটা বন্ধে ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।