সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-২৫

মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কেউ মিথ্যাচার করলে ভীষণ কষ্ট পাই

-------পূজা রায়

বিমল চৌধুরী ॥
মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কেউ মিথ্যাচার করলে ভীষণ কষ্ট পাই

আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কথাটা মনে আসলে নিজের অজান্তেই মনের মাঝে প্রশান্তি লাভ করি, মুক্তিযুদ্ধ কথাটির মাঝে কেমন জানি একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। মনে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যদি সেদিন সকলেই যুদ্ধে যেত, যদি কেউ দেশের বিরুদ্ধে রাজাকারের ভূমিকা না রাখতো, তাহলে তো আমাদের দেশটা ৯ মাসের আগেই স্বাধীনতা লাভ করতো। তাহলে তো এতো মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হতো না আর লাখ লাখ তরুণ তাজা প্রাণ পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হতো না। শুধু ভাবি, কেন এমন হলো না? আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ১৯৭১ সালে ভারতের আগরতলা ছড়িলাম সেক্টরে গেরিলা বাহিনী হিসেবে ট্রেনিং নিয়েছেন। এসব কথা জানান চাঁদপুর পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পূজা রায়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা শিরোনামে আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারের সম্পূর্ণ অংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?

পূজা রায় : প্রথমে আমি চাঁদপুর কণ্ঠকে ধন্যবাদ জানাই, পত্রিকাটি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা বিষয়টি মানুষের মাঝে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় আমরা আমাদের কথা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল চন্দ্র রায়, পিতা মৃত হরিচরণ রায়, মাতা মৃত গৌরাঙ্গিনী রায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী গ্রামে তার জন্ম। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ভারতের আগরতলা বংশনগর যান এবং আগরতলার কাঁঠালিয়া হয়ে ইন্ডিয়া ট্রেনিং সেন্টারের ছড়িলাম সেক্টরে হাজির হন। সেখান থেকে একুশ দিনের গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে ২৭ জনের একটি দলের সাথে মিলিত হন এবং আগরতলা হতে মেলাগড় সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন এবং ২৭ জনের দলের সাথে থেকে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করতে করতে ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলি গাজীপুর এলাকায় পৌঁছেন। এখানে থাকা অবস্থায় মিলিটারি ও রাজাকারদের আক্রমণের শিকার হন। আমার বাবাসহ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে প্রতিহত করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সাথে পর্যাপ্ত অস্ত্র গোলাবারুদ না থাকায় তারা ওই স্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। সেদিন রাজাকারের দল গাজীপুর ও কড়ৈতলী বাজারে অগ্নি সংযোগ করে। তাতে জনমনে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?

পূজা রায় : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি খুবই উৎফুল্ল। কারণ আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত সন্তান। যখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলতে গিয়ে কেউ মিথ্যাচার করেন, তখন ভীষণ কষ্ট পাই। আজকাল বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ ভুয়া শব্দ উচ্চারণ করেন যা শুনে ভীষণ কষ্ট পাই। শুধু ভাবি, যে মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছেন, তারা কি পারেন না নিজেদের মাঝে কেউ যদি ঘাপটি মেরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে থাকেন তাদেরকে প্রতিহত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শব্দ থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে। আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং-০১১৩০০০৪০৫২, গেজেট নং-২৯৬৯। সকলের কাছে একটাই অনুরোধ থাকবে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে তাদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন সেই দিকে দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ লক্ষ রাখবেন। কোনো কিছুর বিনিময়েই যেন তাদের স্বপ্ন হারিয়ে না যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত হয়। আমরা যাতে উন্নত বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

পূজা রায় : আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ হলো বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর এই স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে লাখ লাখ নারী। তাদের আত্মত্যাগ যাতে কোনোক্রমেই বৃথা না যায়, আমরা যেন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি, সাস্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেইদিকে লক্ষ্য রেখে যদি আমরা স্ব স্ব স্থানে থেকে দেশটাকে ভালোবাসতে পারি, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারি, তাহলেই দেশের জন্য আত্মত্যাগকারীদের আত্মা শান্তি পাবে এবং বঙ্গবন্ধুসহ শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়