প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-২৪
বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও এর সফলতার ইতিহাস সবিস্তারে প্রচার করতে হবে
--------এ. কে. জেড. আলম শিমুল
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব করেন তিনি। নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে কেনো প্রয়োজন ছিলো মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য, নিপীড়নের অবসান ঘটিয়েছিল তা জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে মনে করেন এই বীরের সন্তান। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা শিরোনামে আজ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এ.কে.জেড. আলম শিমুল। তার দেয়া সাক্ষাৎকারটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
এ. কে. জেড. আলম শিমুল : আমার বাবার নাম মাহবুবুল আলম চুননু। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের অধীন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের সন্তান। তিনি এই ইউনিয়নেরই ‘নাসিরকোটে’ সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে যুদ্ধে তিনি পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। তিনি বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১-এ ইন্তেকাল করেছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
এ. কে. জেড. আলম শিমুল : যে কোনো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্যে লড়াই করা কোনো বীরের সন্তান হতে পারা সবসময়ই গৌরবের। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই গর্ব করে পরিচয় দেই ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’। যা আমাকে সঞ্চার করে সাহস ও শক্তি। আমি গর্বিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এ. কে. জেড. আলম শিমুল : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা, পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সর্বত্র প্রচার করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে কেন প্রয়োজন ছিল মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য, নিপীড়নের অবসান ঘটিয়েছিল তা জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। একজন নেতা কীভাবে ৬দফার ভিত্তিতে একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিল তা জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক, সামরিক, রাজনৈতিক গুরুত্ব সবিস্তারে প্রচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কেন, কীভাবে ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১-এর প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তা সর্বসাধারণের মাঝে জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ১৯ মার্চ, ১৯৭১-এর প্রথম প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ধারাবাহিক সঠিক ইতিহাস সরকারিভাবে প্রচার ও প্রসারের উদ্যোগ নিতে হবে। চূড়ান্ত বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের দেশ গঠনের নানান উদ্যোগ কীভাবে সফলতার মুখ দেখছিল তা তুলে ধরতে হবে সর্বসাধারণের মাঝে। সর্বোপরি বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও এর সফলতার ইতিহাস সবিস্তারে প্রচার করতে হবে।
উল্লেখ্য, এ. কে. জেড. আলম শিমুল, সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট (সুপারিশপ্রাপ্ত), ১৬তম বিসিএস।