প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-১৫
আমরা এখনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারিনি
-----ফারজানা নাছরিন রত্না
আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা আজ পৃথিবীতে বেঁচে নেই। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান--এটাই আমার সার্থকতা। আমার বাবা ভারতে ট্রেনিং শেষে দেশে এসে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে লড়েছেন সরাসরি যুদ্ধে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা শিরোনামে আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কচুয়া উপজেলার যুদ্ধকালীন বিএলএফসহ সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডারের বড় মেয়ে ফারজানা নাছরিন রত্না। নিচে প্রশ্নোত্তর আকারে তার সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরচিয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
ফারজানা নাছরিন রত্না : আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ওয়াহিদুর রহমান, পিতা মৃত মোঃ হানিফ মাস্টার, গ্রাম : বড় তুলাগাঁও, কচুয়া, চাঁদপুর। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত ডিজিটাল সনদপত্র ও এমআইএস নং : ০১১৩০০০০৭০৭, লাল মুক্তি বার্তা নং : ০২০২৫০৪০১২৮, বেসামরিক গেজেট নং : ১৪৬৫, সাময়িক সনদপত্র নং : ম-৫৬৯০২, পেশা : ব্যবসায়। তিনি ১৯৭১ সালে চাঁদপুর মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি চাঁদপুর মহকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে চাঁদপুর কলেজ মাঠে ডেমি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। পরে তিনিসহ আরো অন্যরা ভারতের আগরতলা মহারাজ কলেজ হোস্টেলে আশ্রয় নেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, এমএ রশিদ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা আদমজী জুট মিলের ছাদু শিল্পী আপেল মাহমুদসহ অনেকে উক্ত কলেজ হোস্টেলে থেকে হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রায় আড়াই মাস ট্রেনিং গ্রহণের পর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রথমে চান্দিনা থানার নওয়াবপুর বাজারের পাশে একটি গ্রামে কচুয়া, বরুড়া ও চান্দিনা তিন থানার যৌথ বাহিনীর একটি ক্যাম্পে অবস্থান করেন। পরে কচুয়া থানায় গিয়ে বিএলএফ-এর থানা অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ সময়ে এফএফ-এর থানা কমান্ডার নিযুক্ত হন আব্দুর রশিদ পাঠান, এমএফ-এর কমান্ডার দায়িত্বে ছিলেন লোকমান পাটোয়ারী। বিএলএফ, এফএফ ও এমএফ-এর সকল সদস্য কচুয়া থানার মধুপুর গ্রামের আমির হোসেন পাঠানের বাড়িতে এক যৌথ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আমার বাবাকে সম্মিলিত বাহিনীর কচুয়া থানা কমান্ডার নির্বাচিত করেন। ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, সেনা সদস্য, ইপিআর সদস্য, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আনসার সদস্য ও স্থানীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সদস্যসহ সর্বমোট ৪শ’-এর অধিক মুক্তিযোদ্ধা কচুয়া থানা এলাকার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য মেহের কালীবাড়ির দক্ষিণে সংঘটিত যুদ্ধ। সে যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বেশ ক’জন সদস্য নিহত হয়। তারা স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক কিছু অস্ত্র, গোলাবারুদ ও একটি ভারী থ্রিইঞ্চ মর্টার উদ্ধার করেন। সেই যুদ্ধে আমার বাবা আহত হন। এর পরপরই কচুয়া, হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর শত্রুমুক্ত হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী ?
ফারজানা নাছরিন রত্না : একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেব আমি গর্ববোধ করি। যে স্বপ্ন নিয়ে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলেন বাবাসহ অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এ দেশে রাজাকারেরা এখনো বুক ফুলিয়ে হাঁটে। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। আমরা এখনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে এখনো আমরা লড়ছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ?
ফারজানা নাছরিন রত্না : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মরে কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করা দরকার।
উল্লেখ্য, ফারজানা নাছরিন রত্না কচুয়া উপজেলার সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।