প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিনব কায়দায় চলছে প্রতারণা। এমনই একটি প্রতারণা চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন, মাদ্রাসা রোড এলাকার শান্তনা ইলেকট্রনিক এন্ড ডেকোরেটরের দোকানের মালিকের সাথে ঘটেছে। প্রতারক চক্র সিলভারের হাড়ি-পাতিল, চামচ, গ্লাস, মগ ইত্যাদি কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর শহরের পালবাজার বকুলতলা রোডস্থ রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। এ ব্যাপারে শান্তনা ডেকোরেটরের মালিক মোঃ ইসমাইল পাটওয়ারী বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সরেজমিনে গেলে ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে বকুলতলা এলাকায় রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুল চলাকালীন অবস্থায় বুধবার (৪ অক্টোবর) এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ইউনিসেফ থেকে এসেছে বলে স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের জানান। তখন অজ্ঞাত ব্যক্তি বলেন, আমি ইউনিসেফ থেকে এসেছি, আপনাদের স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ক’জন। আমরা এই স্কুলের বাচ্চাদের এক বেলা খাবার খাওয়াতে চাই। অজ্ঞাত ব্যক্তির কথা শুনে স্কুলের অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম বলেন, কিছুদিন ধরে তো বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি কমলে তারপর না হয় খাওয়াবেন। এরপরেই লোকটি চলে যান কিছু না বলে। পরদিন ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার স্কুল চলাকালীন অবস্থায় ঐ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি ডেকোরেটরের প্রয়োজনীয় মালামাল এনে অফিস রুমের সামনে রেখে যান এবং স্কুলের শিক্ষকদের কাছে বলে যান, আমি বাজার করে নিয়ে আসছি। তার কিছুক্ষণ পর স্কুলের অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ স্কুল থেকে জরুরি কাজে বাইরে যাওয়ার পরপরই লোকটি একজন ফেরিওয়ালাকে নিয়ে অফিস রুমের সামনে থাকা হাড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য মালামাল ওজনে মেপে বিক্রি করতে থাকেন। এ সময় স্কুলের সহকারী শিক্ষক নাজমা বেগম, লিপি আক্তার এবং একজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। তারা লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এগুলো ওজন দিচ্ছেন কেন? ঐ ব্যক্তিরা তখন বলেন, এই পুরাতন মালামালগুলো বিক্রি করে নতুন মালামাল নিয়ে আসবো। এ সময় উপস্থিত অভিভাবকটি বলেন, আপনারা কী খাওয়াবেন ? তারা বলেন, বিরিয়ানি খাওয়াবো। তারপর স্কুলের শিক্ষকরা সরল মনে বিশ্বাস করে অফিস রুমে চলে যান।
এদিকে ডেকোরেটরের মালিক মোঃ ইসমাইল পাটওয়ারী বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার সময় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে উপস্থিত হয়ে দেখেন, সেখানে ইউনিসেফের কোনো প্রোগ্রাম হচ্ছে না। পুরো কিন্ডারগার্টেন তখন তিনি বন্ধ দেখতে পান। তারপর তিনি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ম্যাডামদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন যে, এখানে কোনো ইউনিসেফের প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় নি। তারা মালামাল পরিবর্তন করে আনবে বলে হয়তো তার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ইসমাইল পাটওয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৪ অক্টোবর বকুলতলা রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনে ইউনিসেফের একটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে বলে এক ব্যক্তি মালামাল ভাড়া নিতে আসে। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টায় ওই ব্যক্তি আমাকে ফোন দিয়ে বলেন যে, ডেকোরেটরের মালামাল নিয়ে আসতে। তারপর আমি বকুলতলা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে মালামাল পৌঁছে দেই। সেদিন বিকেলে আমি স্কুলে গিয়ে দেখতে পাই, ইউনিসেফের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তাহলে আমার ডেকোরেটরের মালামাল গেলো কোথায় ?
জানা যায়, প্রতারকচক্রটি আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি করেছে। চাঁদপুর মডেল থানায় বিবাদীর নামে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিবাদী তখন তার নাম বলেছিলো নিপুণ সাহা, পরনে ছিলো প্যান্ট, শার্ট, মুখমণ্ডলের রং কালো, হালকা মোটা। কিন্তু পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের সময় অন্য নাম আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরটি হচ্ছে : ০১৮৪৫-৭৪৩৭৫২। এই নম্বরে কল দেয়ার পর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু বিবাদীর পরিচয় ও ঠিকানা কিছুই জানেন না বলে বাদী ইসমাইল পাটওয়ালী বলেন।
ঘটনার বিবরণ শুনে চাঁদপুর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নাজিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসলে স্কুলটি বন্ধ দেখতে পান। তখন স্কুলের অধ্যক্ষের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে ঘটনাটি নিশ্চিত হন।