প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন শাহদৌলতপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮) অটোরিকশা নিয়ে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে নিজ বাড়ি হতে বের হন। পরবর্তীতে অন্যান্য দিনের ন্যায় রাতে তিনি বাড়িতে ফিরে না আসলে তার ছেলে অর্পন দেবনাথ গত ২৬ সেপ্টেম্বর বুড়িচং থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। যার নং-১২১৬, তারিখণ্ড২৬/০৯/২০২৩। পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় বুড়িচং থানাধীন রামপুর এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নিখোঁজ ভিকটিম সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮)-এর মৃতদেহ পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে অর্পন দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-৩৭, তারিখণ্ড২৯/০৯/২০২৩, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি।
এই ঘটনার পরপরই এই নৃশংস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার একটি আভিযানিক দল ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১-এর আভিযানিক দলটি গত ১ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৮টা ৪৫ মিনিটের সময় কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন দেবপুর এলাকা থেকে অটোরিকশা চালক সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮) হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামী (১) মোঃ নূর ইসলাম (২৫) (পিতা মোঃ হারুনুর রশিদ, বড়ইয়াকুড়ি, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা), (২) মোঃ মিজান (২৪) (পিতা মৃত মেজাম, বারেরা, থানা-দেবিদ্বার, জেলা-কুমিল্লা), (৩) শিপন মিয়া (২৩) (পিতা মৃত ইসমাইল মিয়া, বড়ইয়াকুড়ি, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা) (৪) মোঃ মিজানুর রহমান (৩৫) (পিতা আলী আহম্মেদ, পনশাহী, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর) এবং (৫) মোঃ মোখলেছ (৩৭) (পিতা আব্দুর রব, গোহাট, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং এ সময় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। আটকের পর তাদের কাছ থেকে ১টি ছোরা, ১ টি চাকু, ১ টি ক্রিজ, ১ টি স্টীলের পাইপ ও ১টি পাইপ গিয়ার উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। প্রায়শই তারা ডাকাতির লক্ষ্যে একত্রিত হয় এবং সুযোগ বুঝে ডাকাতি করে থাকে। গত ০১ অক্টোবর তারিখ রাতেও তারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র-সস্ত্রসহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছিল। এছাড়াও সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮) হত্যার বিষয়ে তারা জানায় যে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃত আসামীরা একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ওইদিন রাত আনুমানিক ৮টায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে কংসনগর যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮)-এর অটোরিকশাটি ভাড়া করে। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রাতে পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিম সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮)কে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের মৃতদেহ পানিতে ফেলে ভিকটিমের অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা এই হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকালে গ্রেফতারকৃত আসামী নূর ইসলামের নিকট হতে নিহত অটোরিকশা চালক সনজিত চন্দ্র দেবনাথ (৫৮)-এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয় এবং পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন বেলতলা বাজারে অবস্থিত গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মিজানুর রহমান (৩৫)-এর অটোরিকশা গ্যারেজ হতে ভিকটিমের অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।