প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
‘কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করে বিক্রয় করা যাবে না’ এমন একটি বিল গত সংসদ অধিবেশনে পাস হলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ফসলি জমির মাটি গিলে খাচ্ছে ইট ভাটা ও নূতন বাড়ি। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটা এবং বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে। অসহায় কৃষকদের আর্থিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী মহলের কতিপয় লোকজন এ মাটির ব্যবসার সাথে জড়িত।
এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রশাসন জেনেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার সুধী মহলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন। এখানে তিন ফসলি জমি থেকে জমির উপরিভাগের ৩ ফুট মাটি ‘টপ সয়েল’ চলে যাচ্ছে ইটভাটা ও বাড়ি নির্মাণে। নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে ক্রেতারা। আবার মাটি বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করলে অসহায় কৃষকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে করে কমছে জমির পরিমাণ। মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলি জমি বিনষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে জমির মাটি আনা-নেয়ার কাজে বর্ষা মৌসুমে নৌকার ব্যবহারে মেতে উঠেছে মাঝিরা। এরা জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর হয়ে রাত-দিন জেগে থাকে কখন নৌকায় মাটি ভরাট করে ব্রিকফিল্ডে পৌঁছে দিবে। মাটি কাটার নৌকা চলাচল করায় সৃষ্ট ঢেউয়ে বিভিন্ন খালের দুপাড়ের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের দানবীয় চাকায় পিষ্ট হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ইটভাটার মালিকগণ নির্বিঘ্নে তাদের এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, অন্যদিকে দীর্ঘসময় থেকে সংস্কার না হওয়া উপজেলার রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের তিন ফসলি জমিতে এখন এক ফসল করাও দায় হয়ে পড়েছে।
৩নং সুবিদপুর ও ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, জমির মাটি নেয়ায় জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তারা বলেন, প্রভাবশালী মহলের দালাল চক্রটি গ্রামগঞ্জে হেঁটে হেঁটে অসহায় দরিদ্র কৃষকদের লোভনীয় টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কিনে নিচ্ছে। এতে করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনও হচ্ছে।
গত ক’দিনে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১নং বালিথুবা ইউনিয়ন থেকে ৫নং গুপ্টি ইউনিয়ন পর্যন্ত স্থাপিত অবৈধ ব্রিক ফিল্ডগুলোতে নৌকা দ্বারা শেষ রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি আনা হচ্ছে। এ সময় একাধিক ব্রিকফিল্ডের মালিক এবং ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো মতামত প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে এবং কী ব্যবস্থা নিবেন এ বিষয়ে জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলি মন্ডলকে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি তিনি রিসিভ করেন নি।