প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
‘জীবন জয়ের হৃদ্যতা নিয়ে দাঁড়াও পাশে বন্ধু, মানবের কল্যাণে তোমার জয় অনিবার্য’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলা মানব উন্নয়ন সেবামূলক সংস্থা জীবনদীপ ব্যাপক আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে ফিডার রোডস্থ জীবনদীপের নিজস্ব ভবনে আয়োজিত জন্মবার্ষিকীর কেক কাটা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং ডিপার্টমেন্ট অফ এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও গবেষক ডাঃ লায়লা আঞ্জুমান বানু।
তিনি তাঁর বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনা এমন একজন মানুষ, যিনি যেকোনো সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করেন এবং তা নিরসনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন। আমরা যতবার আমাদের এনাটমি বিভাগের সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি, ততবার তিনি আমাদের কথা শুনেছেন এবং তা নিরসনে কাজ করেছেন। আজ এই মহান নেত্রীর ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি সেবামূলক সংস্থার আহ্বানে এখানে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। খুশি এখানকার মানুষের আপ্যায়ন ও সেবার মানসিকতা দেখে। তিনি জীবনদীপের মত সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আর্তমানবতার সেবা নিয়ে সকলেরই এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ যদি মানুষের প্রয়োজনে পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কে দাঁড়াবে ? আমাকে মনে রাখতে হবে, আমি একজন মানুষ হিসেবে কতোটুকু সেবা দিতে পেরেছি। প্রতিটি মানুষের মাঝেই আর্তমানবতার মানসিকতা রয়েছে। কেউ তা উপলব্ধি করতে পেরে মানব সেবায় এগিয়ে আসেন, আবার কেউ আসতে চাইছে না। তবে নিজেদের মধ্যে যখন উপলব্ধি হবে, যখন অনুভব করবে এই সমাজের জন্যে আমারও ভালো কিছু করা প্রয়োজন রয়েছে, তখনই আমরা সমাজের অসঙ্গতি দূর করে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। তিনি জীবনদীপের স্বেচ্ছায় রক্তদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, আইনি সহায়তা প্রদান, ডেন্টাল চিকিৎসা, অঙ্গ ও দেহদানের মত সেবামূলক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এসব সেবামূলক কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জীবদ্দশায় যে মানুষটি তার অঙ্গ এবং দেহদানে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন, তখন মনে করতে হবে তিনি সাধারণ মানুষ নন। তিনি একজন মহৎ হৃদয়ের অধিকারী। বুঝতে হবে তিনি অনেকের মতামতকে উপেক্ষা করে এই মহৎ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ পরিবারের অনেকেই চান না যে তার মা, বাবা, ভাই বা আত্মীয়-স্বজন মৃত্যুর পর কাটা ছেঁড়া হোক। আর এজন্যেই দেহদান বা অঙ্গদানের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। তবে যারা অঙ্গদান ও দেহদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন তাদের সকলকে আমি অভিনন্দন জানাই, আপনাদের দানেই কেউ কেউ ফিরে পাবে দৃষ্টিশক্তি, আবার কেউ ফিরে পাবে তার কোনো একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। তবে তিনি এই অঙ্গ ও দেহদানের ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতার কথাও তুলে ধরেন। তবে তা নিরসনে তারা কাজ করছেন বলে জানান।
প্রধান অতিথি জীবনদীপের হয়ে যারা অঙ্গ ও দেহদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন তাদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এনাটমি বিভাগের পরিচয়পত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট তোলে দেন। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টায় আছি অঙ্গ ও দেহদানের মত সেবামূলক কাজে জীবনদীপকে কীভাবে সহায়তা প্রদান করা যায়।
এদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, দেহ ও অঙ্গদানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্তকারী ব্যক্তিবর্গ, আমন্ত্রিত অতিথি ও জীবনদীপের স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের আয়োজন উৎসবে রূপ নেয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
জীবনদীপের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ মনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারের সঞ্চালনায় অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়। আরো বক্তব্য রাখেন জীবনদীপের উপদেষ্টা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জর্জ চৌধুরী, অ্যাডঃ বিল্লাল হোসেন লিজন, স্বেচ্ছায় মরণোত্তর দেহদানকারী শোভা রাণী বিশ্বাস প্রমুখ।
সভায় সুধীজনদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মরণোত্তর দেহদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সানাউল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, শিক্ষক দুলাল কৃষ্ণ গোস্বামী, শিক্ষিকা সুমিতা পাল, কণ্ঠযোদ্ধা কৃষ্ণা সাহা, লীলা মজুমদার, ডাঃ মাসুদ হাসান, জীবনদীপের অন্যতম পরিচালক মৃদুল কান্তি দাস, বিবেকানন্দ যুব সংঘের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক বিমল চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি জয়রাম রায় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে ছোট্ট শিশু রাইয়ানা তাসপিয়ারও জন্মদিন পালন করা হয়। ছোট্ট শিশু তাসপিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হন। অনুষ্ঠান শেষে সকলকে মিষ্টি খাইয়ে আপ্যায়িত করা হয়।