প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
‘জাটকা এবং মা ইলিশের পাশে, আমরা আছি প্রতিটি নিঃশ্বাসে’ এ প্রতিপাদ্যে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে চলছে চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১৫তম জাতীয় ইলিশ উৎসব। উৎসবের ২য় দিন গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় নির্ধারিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, চাঁদপুরের চতুরঙ্গ বিগত ১৫ বছর যাবৎ ইলিশ উৎসব করছে। আমি মনে করি এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলন করে একদিকে ইলিশ রক্ষা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের টনক নড়ে আজ ইলিশ জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজ চাঁদপুর ইলিশের জন্যে ব্র্যান্ডিং হয়েছে। ইলিশ যেখানে বাস করে সেখানেই গবেষণা করা হয়। মেঘনায়-পদ্মায় ইলিশ আগের মতো কেন নেই ? ইলিশ হলো গভীর জলের মাছ। যদি নদীর নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয় তাহলে ইলিশ চলবে কীভাবে? নদীতে নাব্যতা সৃষ্টি ও নদীকে ডুবোচর মুক্ত করতে হবে। তাহলে পদ্মায়-মেঘনায় ইলিশ বিচরণ করতে পারবে।
তিনি ইলিশ উৎসবের আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে ইলিশ উৎসবে একটি সঙ্কট দেখছি, সেটা হয়তো কখনো পূরণ করা সম্ভব হবে না। তা হলো আমাদের তাহমিনা হারুনের অভাব। মহান আল্লাহ তাকে বেহস্তবাসী করুক-এই দোয়া করি।
তিনি ইলিশ উৎসবের আয়োজক কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুধু শহরকেন্দ্রিক না রেখে উপজেলাকেন্দ্রিক করলে সাংস্কৃতিক কার্মকাণ্ড আরো প্রসারিত হবে। তাই এ বিষয়ে আপনাদের আন্তরিকতা প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় আলোচকের বক্তব্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্যাহ বলেন, চাঁদপুরে দুটি উৎসবের জন্যে মানুষ অধীর আগ্রহে থাকে। তা হলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, আরেকটি হলো ইলিশ উৎসব। দুটিরই কান্ডারী হারুন আল রশীদ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসীন আছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তানেরা। তার মধ্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। সারাদেশ আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবার পেছনে তার অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা ইলিশ নামে একটা পণ্য দিয়েছেন। পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে গেলে চাঁদপুরের কথা বললে ইলিশের কথা আগে জানতে চায়। ইলিশ গভীর জলের মাছ। সেটি ডাকাতিয়া নদীতে বাস করতে পারে না। ইলিশের বিচরণের জন্যে যে পরিমাণ গতিপথ প্রয়োজন তা সঠিক না রাখতে পারলে ইলিশ মাছ তার গতিপথ যেখানে পাবে, সেখানে চলে যাবে। নদী নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে, মৎস্য বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছিলাম নাব্যতার জন্যে আপনারা কী করছেন। তখন তারা বলেছিল আমরা নদী নিয়ে গবেষণা করি না। মাছ নিয়ে গবেষণা করি। ইলিশ রক্ষার জন্যে যে অভয়াশ্রম করা হয় সেজন্যে জেলেদের জন্য কী করছেন। অভিযান চলাকালে নদীতে চোর-পুলিশ খেলা হয়ে থাকে। ৮০ কেজি চালে দুমাস জেলেদের চলে না। তাদের জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা কী করা যায়, সে বিষয়ে ভাবার জন্যে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি মনে করেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় যেমনি ইলিশ উৎসব করা হচ্ছে, তাতে তেমনিভাবে বিনোদনও পাওয়া যায়।
ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক রোটাঃ কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে ও ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুন আল রশীদের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার।
২য় দিনে বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশ করেন চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী শুভ্র রক্ষিত, রাজীব চৌধুরী, মুন্না ঘোষ, প্লাবন ভট্টাচার্য্য, এমএইচ বাতেনসহ অন্য শিল্পীরা। তারপর উদয়ন সংগীত বিদ্যালয়, বাউল শিল্পী গোষ্ঠী, নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তাছাড়া একক সংগীত পরিবেশন করেন বাউল সজীব দত্ত, রাবেয়া আক্তার ও নওমী জামান।