প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৩
নৌ-পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার ২৪২ জেলে
কঠোর অভিযানেও দিনরাত চলছে ইলিশ শিকার
মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশ শিকার করছে বহু জেলে। পদ্মা-মেঘনা পাড়ে অস্থায়ী হাট বসিয়ে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন ইলিশ কিনতে। এখন অভিযানের শেষ পর্যায়। আর মাত্র দুটি দিন। জেলেরা কৌশল পাল্টে রাত ১২টার পর থেকে সারারাত ভোর পর্যন্ত মাছ ধরছে। এবার স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অভিযানের মধ্যেও ইলিশ শিকারে মেতে রয়েছে এক শ্রেণির জেলে। আটক হওয়ার ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করছে না। চলমান নিষেধাজ্ঞার গত ১৭ দিনে চাঁদপুর নৌ পুলিশের অভিযানে ২৪২ জন জেলে আটক হয়ে কারাগারে গেছে। অনেকে জাল নৌকা খুইয়েছেন।
|আরো খবর
ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বিপণন ও মজুদ ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের। মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নদীর পাড়েই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। নিষেধাজ্ঞার কথা যেন কোনোভাবেই জেলেদের কানে যাচ্ছে না। দিনরাত চলছে ইলিশ শিকার। সেই সাথে বসছে বাজার। এসব ইলিশ কিনতে পদ্মা-মেঘনা পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলে ছুটে আসছেন বিভিন্ন এলাকার ইলিশ হকার। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিষিদ্ধ মৌসুমে গড়ে ওঠা অস্থায়ী ইলিশের হাটে। তবে প্রশাসন একদিকে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে অন্যদিকে নদীর পাড়ে পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী থেকে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম। মা ইলিশ রক্ষায় এই সীমানায় মাছ ধরায় চলছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান বাস্তবায়নে নৌ পুলিশের অভিযান চলছে মেঘনা নদীতে। পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগও তৎপর। প্রশাসনের একাধিক টহল টিম দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই নদীতে ডিউটি করছে।
প্রশাসনের কঠোর এই অভিযানে ফাঁকে ফাঁকে অনেকটা আড়ালে আবডালে থেকে চুরি-চামারি করে নদীতে ইলিশ শিকার হচ্ছে। চলতি অভিযানের ১৮তম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার এ পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৪২ জন জেলেকে। সাথে জব্দ করা হয়েছে ৮৫টি জেলে নৌকা, ৪৬ লাখ ৮১ হাজার ৬শ’ ১৫ মিটার জাল ও ১৬শ’ ৪ কেজি ইলিশ মাছ। চাঁদপুর নৌ পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃত জেলেদের মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে ১১৪ জন জেলেকে। ১৭ জন জেলেকে দেয়া হয়েছে নগদ অর্থদণ্ড। তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৭৩ হাজার টাকা। বাকি ১১১ জন জেলেকে মৎস্য আইনে মামলায় কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান বাস্তবায়নে নদী জেলে মুক্ত রাখতে নৌ পুলিশের থানা ও ফাঁড়ির ৬টি ইউনিট কাজ করছে।
৯ লাখ ৮০০ মিটার জাল, ১০৮ কেজি ইলিশ মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। ৩টি নৌকাসহ আটক করা হয় ৮জনকে। ২টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪ জনকে সাজা ও ০১ জনকে ৫০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ২ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার জিম্মায় প্রদান করেন।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নিষেধাজ্ঞার আরো যে দুটি দিন রয়েছে, তাতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখা দরকার। আগামী ৩ নভেম্বর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষ হবে।