প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিকলীগ চাঁদপুর জেলা কমিটির আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ৩০ মে বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা শ্রমিকলীগসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ও বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৮১ সালের ২১ মে আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। তার দায়বদ্ধতা ছিল বাংলার মানুষের কাছে। জাতির পিতা যেমনি করে নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি করে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে জননেত্রী বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোটের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সক্ষম হন স্বৈরচারী সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় যখন সারাবিশ্ব হতবিহ্বল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা পেয়েছি বিনামূল্যে ভেকসিন। মহান সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ও শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে আমরা করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আজ তার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তলাবিহীন ঝুড়ি নাম থেকে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সফল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। মানবতার মাসহ লৌহ মানবী হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বমাঝে সম্মানিত হচ্ছেন। এসব নানা কারণে আজ জামাত, বিএনপি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে নির্বাচনে হারানো যাবে না। তাই তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। তাকে হত্যার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনা ভীত নয়। শেখ হাসিনার বড় শক্তি বাংলার কোটি কোটি মানুষ। তাদের ভালোবাসায় তিনি দেশে ফিরে এসেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই কোনো হুমকি ধমকি দিয়ে শেখ হাসিনাকে পরাস্ত করা যাবে না। ৭১ সাল, ৭৫ সাল আর ২০২৩ সাল এক নয়।
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি আর আওয়ামী লীগের একজন নেতা-কর্মী বেঁচে থাকতেও জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা আছেন, থাকবেন। তিনি দেশের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার জন্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি চাঁদপুর শহর রক্ষায় মেঘনা-পদ্মায় যাতে কেউ বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্যে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে চাঁদপুর-হাইমচরকে রক্ষার দাবিতে আমরা জাতীয় নেতা আব্দুল্লা সরকারসহ রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেত্রী থাকাবস্থায় আমরা তাঁর কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, তিনি কথা দিয়েছিলেন আমি যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারি, তাহলে অবশ্যই চাঁদপুর-হাইমচর রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। হাইমচর ও চাঁদপুর রক্ষায় তিনি কাজ করেছেন। এখন বালু শিল্প বলে মেঘনা, পদ্মা থেকে বালুখেকোরা অবৈধ বালু ব্যবসা করবে, তা হতে পারে না। চাঁদপুর, হাইমচর রক্ষায় বালুখেকোদেরকে প্রতিহত করতে হবে। চাঁদপুরের মাটির সাথে কেউ ছিনিমিনি খেলবে, আর দলের বদনাম করবে তা হতে পারে না। চাঁদপুর-হাইমচরের উন্নয়নে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সকল সময়ই তৎপরতার সাথে কাজ করেছেন। আগামীতেও তারা সেভাবেই মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। কোনো অনিয়ম করে কেউই পার পাবেন না। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন আছে এবং থাকবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম ওহিদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নূর ইসলাম মিজি, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাব্বির হোসেন মন্টু দেওয়ান, মঞ্জু মাঝি, জেলা মৎস্য লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মালেক দেওয়ান, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শফিক গাজী প্রমুখ। বক্তারা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে কোনো কোনো ব্যক্তির দেয়া অহেতুক মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্র ও জেলা নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ফেসবুক নির্ভর নয়, আওয়ামী লীগ কর্মীবান্ধব বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সকল সময়েই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে এবং সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। আজ যারা ফেসবুকে স্টেটমেন্ট দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন, তারা কারা? ২০০৮ সালের আগে তারা কোথায় ছিল, তাদের পরিচয় কী তা সকলেরই জানা আছে। আজ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সেক্রেটারী দলের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ। দলের দুঃসময়ে এরাই নেতা-কর্মীদের একত্রিত করে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়েই তারা নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত যতোদিন দলের নেতা-কর্মীরা চাইবেন, ততোদিনই তারা নেতৃত্বে থাকবেন। তাদের নেতৃত্বেই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন রয়েছে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তারা চাঁদপুর ও হাইমচর রক্ষায় বালু উত্তোলন যাতে না হয় সেদিকেও নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।