প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অবঃ) ড. আজিজ আহমেদ পিএসসি, এনডিসি, জিআর বলেছেন, ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। আমার বাবা তৎকালীন পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে চাকুরির সুবাদে আমরা করাচীতে থাকতাম। যুদ্ধকালীন সময় আমি দাদার বাড়িতে এসেছিলাম, সেই আসায় আর যাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন যুদ্ধের খোঁজ-খবর নেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেডিও। বয়সে ছোট হলেও যুদ্ধের খোঁজ-খবর প্রতিনিয়ত রাখতাম। রেডিও’র বাইরে শহর থেকে কেউ গেলে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করতাম। তিনি বলেন, আমার বয়সে ছোট বা সমবয়সী অনেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন বা বিভিন্ন উপায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনেছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আমৃত্যু থাকবে।
তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন, আমি পড়াশোনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড অব বিজিবি প্রধান ছিলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি, কিন্তু পুরো জীবনে একটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে, সেটি হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। এই অতৃপ্তি আমৃত্যু থেকে যাবে।
তিনি বলেন, আমি বিজিবিতে থাকাকালীন ওই বাহিনীতে কর্মরত যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের সকলকে পদোন্নতি দিয়েছি, এমনকি বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং কর্মরত সদস্য যাদের জমি আছে ঘর নেই অথবা যাদের ঘর নেই তাদের সকলকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ঘর করে দিয়েছি, যা এখনো চলমান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের প্রত্যেক পরিবারকে সেনাপ্রধান থাকাবস্থায় ৫ লাখ টাকা করে ঘর তৈরির ব্যবস্থা করেছি।
তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানুন, সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করুন। তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কারো ডাকে হয়নি, একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, অন্য কারো ডাকে নয়। এটি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।
সাবেক সেনা প্রধান গতকাল ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে বিজয় মেলা কমিটির আয়োজনে আয়োজিত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০২২-এর চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এমএ ওয়াদুদের সভাপতিত্বে ও বিজয় মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদের উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল অতিথিকে বিজয় মেলার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা, উত্তরীয় ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পূর্বে প্রধান অতিথি সাবেক সেনা প্রধান ড. আজিজ আহমেদের জীবনী পাঠ করে শোনান সংস্কৃতি কর্মী ফাতেমাতুজ জোহরা।