প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫
অবসর সুবিধা বোর্ডের জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ষোলদানা গ্রামের মো. তাফাজ্জল হোসেন। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা সেবায় নিজেকে নিবেদন করা এই শিক্ষক ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর লতিফগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি চরম অবহেলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার শিকার হন। অবসরকালীন সুবিধার টাকা আজও তার হাতে পৌঁছেনি। আর এই দীর্ঘ অপেক্ষা এখন তার জীবন-মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি তার অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্যে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বাংলাদেশ অবসর সুবিধা বোর্ডে জমা দেন। পরবর্তীতে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তার ব্যাংক হিসেবে পৌঁছালেও অবসর সুবিধার অর্থ এখনো আটকে আছে। এর মধ্যেই তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে দুটি প্রাণঘাতী রোগÑমূত্রথলির ক্যান্সার এবং পরবর্তীতে ফুসফুসের ক্যান্সার।
তাফাজ্জল হোসেন জানান, মূত্রথলির ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকেই তার চিকিৎসা খরচ মেটাতে ঋণগ্রস্ত হতে হয়। আর ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠে। গত এক বছরে তিনি আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। কেমোথেরাপি, সিটি স্ক্যান এবং অন্যান্য জটিল চিকিৎসা চালাতে গিয়ে তিনি এখন প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার ঋণে ডুবে গেছেন। অথচ এতোকিছুর পরও অবসর সুবিধার অর্থ তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।
বর্তমানে তাফাজ্জল হোসেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার ফুসফুসে পানি জমেছে, যা অপসারণে নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তার এই চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বারবার অবসর বোর্ডে ধর্ণা দিয়েও কোনো সাড়া মিলেনি। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা যেন এক অসহায় মানুষের জন্যে মৃত্যুদণ্ড সমতুল্য হয়ে গেছে।
তাফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি সারাজীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়েছি, কিন্তু আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি অন্ধকারে পড়ে আছি। অবসর সুবিধার টাকাটা যদি আগে পেতাম, তাহলে হয়তো এতোদিনে চিকিৎসার খরচ নিয়ে এভাবে লড়াই করতে হতো না। আজ আমি বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল।" এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী ও স্থানীয়রা। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রতি এমন উদাসীনতা শুধু অমানবিক নয়, বরং প্রক্রিয়াগত জটিলতার নিকৃষ্ট উদাহরণ। সচেতন মহলের অভিমত, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাফাজ্জল হোসেনের অবসর সুবিধার অর্থ প্রদান করার জন্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার এই মানবিক আর্তনাদ আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়কে স্পর্শ করবে, যদি আমরা তার পাশে দাঁড়াই। একদিকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই, অন্যদিকে ঋণের ভারÑএই অসম যুদ্ধের অবসান হোক। প্রশাসন এবং সমাজের সবার প্রতি আহ্বান, তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। আমরা কি একজন শিক্ষকের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে পারি না? প্রশাসনিক জটিলতার অবসান ঘটিয়ে তাফাজ্জল হোসেনের অবসর সুবিধার অর্থ দ্রুত তার হাতে তুলে দিন—এই দাবি ছাড়া আমাদের অন্য কিছু নেই।
আমরাও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তাফাজ্জল হোসেনকে বাংলাদেশ অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে তার ন্যায্য প্রাপ্য দ্রুত পরিশোধ করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং জোর দাবি জানাচ্ছি। কেননা এটা তার প্রতি করুণা করা নয়, বরং যথাসময়ে তার বেতনের ছয় শতাংশ সঞ্চিত অর্থ লভ্যাংশসহ তাকে পরিশোধ করাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কথা হলো, এই দায়িত্ব কি অবসর সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সঠিকভাবে পালন করেন, না চুক্তিভিত্তিক সম্পাদন করেন? ওপেন সিক্রেট বিষয় হলো এই যে, অবসর সুবিধা বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অগ্রিম নগদ কিছু না পেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর এই ন্যায্য পাওনা বছরের পর বছর চলে গেলেও পরিশোধ করেন না। ফরিদগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক তাফাজ্জল হোসেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বাস্তবতা হলো, তিনি তো তার দুরারোগ্য ক্যান্সারের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে করতেই হয়রান ও নিঃস্ব, তিনি অবসর সুবিধা বোর্ডে ন্যায্য পাওনার জন্যে অবৈধভাবে অগ্রিম কিছু পরিশোধ করবেন কীভাবে?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিব সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ অবসর সু্বধিা বোর্ডে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে সোচ্চার হবার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় তাফাজ্জলের মতো নিরীহ শিক্ষকরা অবসরোত্তর আর্থিক সুবিধা না পেয়ে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাবে, নয়তো মনঃকষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছাড়তে হবে। আমরা অবসর সু্বধিা বোর্ডে কর্মরত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে দুদক এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সক্রিয় হতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।