রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়েছে, সেটাও দেখতে হয়েছে!
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ উল্লাহ রতন। হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা গ্রামের মৃত আবদুল মতিনের ছেলে। স্ত্রী আর চার সন্তান নিয়ে ঢাকার পূর্ব কাফরুলের আহমেদ ম্যানসনের স্থায়ী বাসিন্দা। চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, মেজো আর সেজো ছেলে এমবিএ করা আর ছোট ছেলে লন্ডনে ব্যারিস্টারি অধ্যয়নরত। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ের দিকে মুক্তিযুদ্ধে উচ্চতর ট্রেনিং নিতে ভারতে চলে যান তিনি। তার আগে অনারারী ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠানের তৈরি পাঠান বাহিনীর হয়ে কলিম উল্যাহ্ ভূঁইয়া, আবু জাফর মোঃ মঈন উদ্দিন, আঃ করিম পাটোয়ারী ও রাজা মিয়াসহ আরো ক’জন মিলিয়ে এপ্রিলে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেন। এই বীর যোদ্ধা বলেন, যুদ্ধের কাজ চলমান থাকাবস্থায় ভারত থেকে পাঠান বাহিনীর প্রধান জহিরুল হক পাঠানের কাছে চিঠি আসে ১০ জনকে উন্নত প্রশিক্ষণার্থে ভারতে পাঠানোর জন্যে। সেই ১০ জনের টিমে আমি একজন ছিলাম। ট্রেনিং শেষ করে ভারতের মেলাঘরে আসার পর মেলাঘর ক্যাম্প প্রধান আমাদেরকে সিলেটে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। ঠিক সে সময় আমাদের প্রধান ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠান মেলাঘরে গিয়ে আমাদেরকে সিলেটে না পাঠিয়ে হাজীগঞ্জ নিয়ে আসেন।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ উল্লাহ রতন। তিনি জানান, যুদ্ধের সময় বেশ দাপুটে যোদ্ধা ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ নিয়ে কথোপকথনের কিয়দংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

আহমেদ উল্লাহ রতন : ১৯৭১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এখনো বেঁচে আছি। আল্লাহর নিকট শোকরিয়া আদায় করি। জাতির পিতার ডাকে নিজের ইচ্ছায় ঘর ছেড়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি এটাই আমার জীবনের পরম পাওয়া এবং সার্থকতা। ৫২ বছরে কতো সরকার ক্ষমতায় এলো। রাজাকাররা আমার পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে দাপটের সাথে চলেছে। এই কষ্ট সইতে হয়েছে। এখন মরে গেলেও কষ্ট নেই। কেননা বঙ্গবন্ধুর কন্যা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দেশের মানুষ সুখে আছে, শান্তিতে আছে। এটাই আমার পরম তৃপ্তি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

আহমেদ উল্লাহ রতন : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কয়েকবার মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওপেন হার্ট সার্জারী, ফুসফুসে পানি জমাসহ ডায়াবেটিস এবং সর্বশেষ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখন অচল প্রায়। তবুও আমি মনে করি আমি ভালো আছি। বহু সহযোদ্ধা আরো আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তাদেরকে রাষ্ট্র সম্মান দিচ্ছে না এটাই কষ্ট। সম্মানের ক্ষেত্রে বৈষম্য কাম্য নয়। আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারকে সমান সুযোগ দিতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

আহমেদ উল্লাহ রতন : মুক্তিযুদ্ধের সময় বলাখাল খেয়াঘাটের কাছে পাকবাহিনীর লঞ্চ আক্রমণ জীবনের কঠিন যুদ্ধ ছিলো। এরপর নরিংপুরের যুদ্ধ, খাজুরিয়া বাজারের যুদ্ধ ও কড়ইতলীর যুদ্ধ লোমহর্ষক। আজো শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। আমার কমান্ডার জহিরুল হক পাঠানকে আমি স্যালুট জানাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

আহমেদ উল্লাহ রতন : নিজের চোখের সামনে শহীদ হয়েছে ফারুক। এভাবে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্থক হতো যদি বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা না করতো। ১৯৭৫ পরবর্তী সময় রাজাকার ও বিএনপি দেশ শাসন করেছে। দেশের কাঠামো শেষ করে দিয়ে গেছে। এসবে আমি অসন্তুষ্ট। মুক্ত একটি দেশ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম। তবে সময় শেষ হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে আছেন। তাই আশা করি আবার ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি পরায়নদের নির্মূল করে ছাড়বেন। এতেই আমি সন্তুষ্ট হবো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

আহমেদ উল্লাহ রতন : মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে। মৃত্যু হতে পারতো ১৯৭১ সনে বা এর আগে এবং পরে। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যখন বেঁচে আছি, তখন অবশ্যই একটি শোষণ, দুর্নীতিমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সরকার ও বিরোধী দল দেখে মরতে চাই। আল্লাহ যেন তা কবুল করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

আহমেদ উল্লাহ রতন : পৃথিবীর জন্ম থেকে শেষ অবধি নতুন প্রজন্ম দায়িত্ব নিয়েই দেশ চালাবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আমার এই সোনার বাংলায় রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশ চালাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রজন্ম। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ হবে জাতি ও রাষ্ট্রের স্লোগান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়