রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

শিক্ষাক্ষেত্রে এখন আর শিক্ষার্থীর বয়স নয়, তার শেখার আগ্রহই বিবেচ্য
বিমল চৌধুরী ॥

আলোকিত নারী তৈরির পীঠস্থান হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বর্ষপূর্তি উৎসব গতকাল ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিসহ বিদ্যালয়ের নবীন, প্রবীণ ছাত্রী, অভিভাবক ও স্বজনদের ব্যাপক উপস্থিতিতে আনন্দমুখর পরিবেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শত বর্ষপূর্তি উৎসবের শুভ সূচনা করেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। আর শুভ উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সখিনা খাতুন।

প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনি এমপি সুন্দর আয়োজনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শত বর্ষপূর্তি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যেই একটি মাইলফলক। আজ মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সেই মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আগামীতেও এমন করে কয়েকশ’ বছর অতিক্রম করবে সাফল্যের সাথে-আমি সেই প্রত্যাশা করছি। তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অভিনন্দন জানান বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীদের প্রতি, যাঁরা দেশমাতৃকার উন্নয়নে কর্মক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করে বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছেন। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণে তাঁর বাবা এমএ ওয়াদুদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তাঁর আপন খালা সখিনা খাতুনের প্রতি, যিনি ৮৩ বছর বয়সেও আজকের অনুষ্ঠানে এসেছেন হৃদয়ের টানে।

তিনি যতীন্দ্র মোহন ও তাঁর সহধর্মিণীর কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁদের প্রচেষ্টায় দিদিমণির পাঠশালা নামে বিদ্যালয়টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। আজ তা মাতৃপীঠে রূপান্তর হয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সুনামের সাথে এগিয়ে চলছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আসীন হয়েছেন দেশের উচ্চাসনে।

তিনি বলেন, আমি যদিও এ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি, তারপরও বিদ্যালয়ের সাথে আমার রয়েছে নাড়ির টান। আমার মা, খালা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে আমি বিদ্যালয়টিকে মন থেকে ভীষণ ভালোবাসি। বিদ্যালয়ের সাথে রয়েছে আমার প্রাণের সম্পর্ক। একজন এমপির জন্যে তার নিজের এলাকা হলো একটা শিকড়, এ শিকড়ের টানেই আমি আজকের অনুষ্ঠানে ছুটে আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, মাতৃপীঠ আজ শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সাথে খাপ খাওয়াতে হলে আমাদেরকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। মানসিক, সৃজনশীলসহ সকল বিষয়ে শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন আর কোনো শিক্ষার্থীর বয়সের বিচার বিবেচ্য নয়, তার শেখার আগ্রহই বিবেচ্য হবে। বিবেচ্য হবে তার মন-মানসিকতা। উন্নত জাতি গঠনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। তাই সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষের প্রয়োজন রয়েছে। মাতৃপীঠসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাবে। তিনি বিদ্যালয়ের শতবর্ষে আগত ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে আরো বলেন, আজ নবীনদের সাথে প্রবীণদের উপস্থিতিতে মনে হচ্ছে সকলেই ষোড়শী।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথের সভাপ্রধানে সময় স্বল্পতার কারণে অতিথিদের মাঝে শুধুমাত্র বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, ডাঃ এসএম সহিদ উল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ আব্দুর রশিদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির প্রতি সম্মান জানিয়ে শত বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ টিভি ও বেতারের কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পকের পরিবেশনায় চাঁদপুরের খ্যাতিমান শিল্পীরা মনোজ্ঞ সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। কয়েকভাবে বিভক্ত শতবর্ষ উৎসব যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মুনিরা আক্তার, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলো আক্তার, উপস্থাপনা পরিষদের আহ্বায়ক রাশেদা আক্তার, সদস্য সায়েরা কাকলী, তানজিলা কায়সার, মোর্শেদা বেবী ও তুবা।

শতবর্ষ উৎসবকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে উঠে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌথ পরিবেশনায় মাইকে ভেসে আসা ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়’ এমনি গানের সুরে উপস্থিত সকলের মাঝেই হারানো স্মৃতি জেগে উঠে। এ সময় তারা একে অপরকে আবেগাপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং নিজের অজান্তেই অনেকে কণ্ঠ মিলাতে থাকেন বেজে উঠা গানের সাথে। তাদের এমন আবেগঘন মুহূর্তে পুরো আয়োজনই পরিণত হয় মিলনমেলায়। বয়সের বাধা পেরিয়ে সকলেই মিলে মিশে একাকার হয়ে যান হৃদয়ের টানে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে অনুষ্ঠানস্থল চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠকে সাজিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন সাজে। সাজানো সেই মাঠে লাল, নীল, সাদা, কালো বিভিন্ন পোশাকের উপস্থিতিতে মাঠটি রংধনুর রূপ ধারণ করে। সকলের উচ্ছ্বসিত আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে উজ্জীবিত হয় মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের সফলতা। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তাসহ সকল বিষয়েই উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজন ছিলো লক্ষ্যণীয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যর পর বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তুলে ধরেন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তাদের স্মৃতিকথা। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রখ্যাত ব্র্যান্ড দল ‘জলের গান’-এর কনসার্টে কণ্ঠশিল্পী কণা ও তার দলের মনোজ্ঞ পরিবেশনা এবং আকর্ষণীয় র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণ। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিলো উৎসবের আমেজ। সকাল সাড়ে ৮টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালি। নেচে-গেয়ে উৎসব শেষে উৎসবের আনন্দ হৃদয়ে ধারণ করে বাড়ি ফিরেন নবীন-প্রবীণ ছাত্রীরা। সফলতার সাথে শেষ হয় মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বর্ষপূর্তি উৎসব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়