রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

যুদ্ধের বিজয় যে কতো বড়ো প্রাপ্তি তা শুধু যারা যুদ্ধ করেছে তারাই বুঝে
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমান্ডার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান খান। হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দসার খান বাড়ির মৃত চাঁন খাঁর ছেলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। স্ত্রী এবং ৩ সন্তান নিয়ে ভালো আছেন। বড় ছেলে পিএইচডি করেছেন, ছোট ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেছেন আর একমাত্র মেয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকে কর্মরত আছেন। নিজে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পদে চাকুরি জীবন থেকে অবসরে যান আরো আগে। তিনি মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে ট্রেনিং করতে যে দলটি হাজীগঞ্জ থেকে ভারতে প্রথম যায়, সেই ১১ জনের মূলে ছিলেন এই বীর যোদ্ধা। ভারতের অম্পি নগরে ট্রেনিং শেষ করে অস্ত্র নিয়ে প্রথমে হাজীগঞ্জের নাসিরকোর্টে ঢুকেন। ১১ জনের অস্ত্র জমা রেখে সবাইকে ছুটি দেন। জমাকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিলো এন্টি ট্যাঙ্ক, এন্টি পারসোনাল মাইন, এলএমজি, এসএলআর, বেয়নেট ইত্যাদি। নাসিরকোর্টে ঢুকার পর তিনি সংগ্রাম পরিষদ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন। এরপরে সংগঠনকে গোছানোর দায়িত্ব নেন। সে সময় যারা আওয়ামী লীগ করতো তাদেরকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মূল দায়িত্ব ছিলো হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট ও এলাকায় অপরিচিত ব্যক্তি প্রবেশ সম্পর্কে অবগত করা। যুদ্ধকালীন সময় সিদ্দিকুর রহমান বৃহত্তর হাজীগঞ্জ তথা পূর্বে চিতোষী, পশ্চিমে মতলবের মাস্টার বাজার, দক্ষিণে রামগঞ্জের পানিয়ালা, উত্তরে নারায়ণপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় দায়িত্ব পালন করতেন। যুদ্ধের পুরো ৯ মাসের মধ্যে ১ ঘন্টার বেশি ঘুমাতেন না তিনি। ১২টি স্পটে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তিনি। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাজীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান। যুদ্ধের সময় বেশ দাপুটে যোদ্ধা ছিলেন তিনি। কাউকে পরোয়া করতেন না বলে জানান এই বীর। যুদ্ধের কিছু স্মৃতিকথা চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো :

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

সিদ্দিকুর রহমান খান : আমার অনুভূতি বলে বুঝাতে পারবো না। তবে মায়ের পেট থেকে কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মা নিজে যেমন খুশিতে আত্মহারা হয় তেমনি ডিসেম্বর মাস আসলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আত্মহারা হই। যুদ্ধের বিজয় কতো বড়ো প্রাপ্তি তা শুধু যারা যুদ্ধ করেছে তারাই বুঝে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

সিদ্দিকুর রহমান খান : আমার চাকুরি জীবনে আমি কোনো দিন ঘুষ খাইনি, অন্যায় করিনি, সরকারি নিয়মের বাইরে চাকুরি করিনি। যার কারণে আমার মনে কালো দাগ নেই। সেসব চিন্তা করে বলবো সার্বিকভাবে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?

সিদ্দিকুর রহমান খান : ইন্ডিয়াতে ট্রেনিং করার পরপর আমাদের কাছে ম্যাসেজ দেয়া হয় লাকসাম রেল স্টেশনের পাশে একটি বিড়ির ফ্যাক্টরিতে পাকবাহিনী ও রাজাকার আলবদর ৩২ জন মেয়েকে আটকে রেখে ধর্ষণ করছে। অপারেশন করে সেই বিড়ির ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে মেয়েদের উদ্ধার করতে হবে। সেই অভিযানে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আর ৫ জন বাঙালি আর্মির লোককে নির্বাচিত করা হয়। সেই ৫ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে আমি একজন। সেই অভিযানের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর আপন ভাই ক্যাপ্টেন মাহবুব। শেষ পর্যন্ত আমরা ১০ জনের দল সেই ফ্যাক্টরীতে অভিযানে যাই। এক পর্যায়ে সেই ফ্যাক্টরীর পিছন দিয়ে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকা মাত্র এক রাজাকার আমাকে দেখে ফেলে। ঠিক সেই মুহূর্তে বন্দী এক নারী তার পরনের কাপড় দিয়ে আমাকে ঢেকে দেয়। পরে আমরা ক্যাম্পে ঢুকে এক নারকীয় ঘটনা দেখি। ৩২ জনের প্রায় সবাইকে উলঙ্গ করে রাখা হয়েছে। পুরো ৩২ জনের ২২ জনকে আমরা মৃত পাই। তাদের সবার শরীরে প্রচুর নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পাই। জীবিত ১০ জনকে উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যাবার সময় ৩ জন পথিমধ্যে মারা যায়। বাকি ৭ জনকে ভারত সীমান্তের কাছে সেই ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে দেশে রেখে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করা হয়। এ ঘটনাটি আমাকে সবসময় তাড়িত করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

সিদ্দিকুর রহমান খান : যার নির্দেশে আমরা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি তার মেয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক ক্ষমতায় থাকলে আমি সন্তুষ্ট। দেশের মাটিতে যখন দেখি প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঠিক মতো কাজ করেন না তখন নিজে অসন্তুষ্ট হই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

সিদ্দিকুর রহমান খান : বাঁচার ইচ্ছা তো আল্লাহর হাতে। তবে দেশের মানুষ যেন হাত পেতে না খেতে হয়, শান্তিতে থাকতে পারে, এমনটা মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক শক্তি যেনো দেশ থেকে বিলুপ্ত হয় সেটা দেখার ইচ্ছা আছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?

সিদ্দিকুর রহমান খান : মাতৃভূমিকে ভালোবাসো, দেশে শান্তি বজায় রাখো, দুর্নীতি বন্ধ করো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়