প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক পাটোয়ারী। হাজীগঞ্জের শ্রীপুর পাটোয়ারী বাড়ির সন্তান। স্ত্রী আর ২ সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে স্কুল ছাত্র ছিলেন। শেখ মুজিবের ডাকে সাড়া দিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম দিয়ে ৭ নৌকায় ৬৩ জনের দল ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতে পৌঁছেন। ভারতের অম্পিনগরের ক্যাম্পে ২১ দিন কাপ্টেন জে কে শর্মার অধীনে ট্রেনিং করেছেন। আসামের মেলাঘর হোল্ডিং ক্যাম্পে থেকে মেজর হায়দারের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে চৌদ্দগ্রাম দিয়ে দেশে ঢুকেন।
চৌদ্দগ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে হাজীগঞ্জের নাসিরকোট স্কুলের ক্যাম্পে নভেম্বর মাসে চলে আসেন। যুদ্ধ শেষে নাসিরকোট শহীদ স্মৃতি হাইস্কুলে ফের ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। মেট্রিক পাস করার পর ঢাকার পলিটেকনিক্যালে পড়ে প্রবাসী হন। ১৯৯৪ সালের দেশে ফিরে প্রাইভেট ফার্মে চাকুরি নেন। এখন বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন এই বীর।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমদাদুল হক পাটোয়ারী। ফুলছোঁয়া গ্রামে যুদ্ধের পর পর ৮৩ জন পাক বাহিনীর সোলজার আমাদের হাতে আত্মসমর্পণ করেনি আমরা তাদেরকে মেরে ফেলবো সেই অজুুহাতে। পরে মিত্র বাহিনীর কাছে তাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। আরো না বলা বহু কথা বলেছেন এই বীর, যার একাংশ চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?
ইমদাদুল হক পাটোয়ারী : বিজয়ের মাস আসলে খুব ভালো লাগে, বিজয়ের মাসে সরকারি অনুষ্ঠানে গেলে সহযোদ্ধাসহ অন্য সকল মুক্তিযোদ্ধার সাথে দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয়। তা নিয়ে কী যে অনুভূতি হয় তা বলে বোঝাতে পারবো না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?
ইমদাদুল হক পাটোয়ারী : ইনশাল্লাহ সার্বিকভাবে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করে।
ইমাদুল হক পাটোয়ারী : যেদিন চাঁদপুর পাক হানাদার মুক্ত হয়, সে সময় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকবাহিনীর একটি দল পায়ে হেঁটে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে নেমে আসে। ৮৩ জনের সেই দলটি হাজীগঞ্জের ফুলছোঁয়া তাঁতী বাড়ির সামনে এসে পথ হারিয়ে ফেলে। পরে গ্রামের মানুষজনের মাধ্যমে আমরা খবর পাই পাকবাহিনীর একটি দল ভারী অস্ত্র নিয়ে ফুলছোঁয়া অবস্থান করছে। পরে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার সত্যতা পাই। এর পরেই সেখানে পাকবাহিনীর সাথে আমাদের যুদ্ধ হলে সেই যুদ্ধে পাকবাহিনীর এক সৈনিক মারা যায় ও আরেক সৈন্যের পায়ের গোড়ালি আমাদের গুলিতে উড়ে যায়। পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পণের কথা বললে তারা অস্বীকৃতি জানায়। পরে চাঁদপুর থেকে মিত্রবাহিনীকে খবর দেয়া হলে তারা ফুলছোঁয়া গ্রামে আসলে মিত্রবাহিনীর কাছে পাকবাহিনীর সেই দলটি আত্মসমর্পণ করে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?
ইমাদুল হক পাটোয়ারী : জাতির কাণ্ডারী স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বর্তমানে দেশে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। অসন্তুষ্টির কিছু নেই বলে মনে করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?
ইমাদুল হক পাটোয়ারী : আমার বাঁচা মরার বিষয়টি আল্লাহর হাতে, এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?
ইমাদুল হক পাটোয়ারী : শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করলে প্রকৃত রাজনীতির মর্যাদা মিলবে। আর তাদেরকে বলি, রাজনীতি করলে জাতির পিতার আদর্শের রাজনীতি করুন।