বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কারা কারা আছেন, কারা ১০টায় এসে ১২টায় চলে যান, কারা দায়িত্ব পালন করেন না-তাদের তালিকা চাই

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কারা কারা আছেন, কারা ১০টায় এসে ১২টায় চলে যান, কারা দায়িত্ব পালন করেন না-তাদের তালিকা চাই
স্টাফ রিপোর্টার ॥

গতকাল ১ অক্টোবর শনিবার বিকেলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হাসপাতালের তৃতীয় তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।

কমিটির সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির সভাপতিত্বে ও উক্ত হাসপাতালের তত্ত্বাবাধয়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমানের পরিচালনায় সভার শুরুতে হাসপাতালের সার্বিক বিষয় নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সেবার মান উন্নত হয়েছে। আমাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সঙ্কট রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলছে, খুব সহসাই শেষ হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীদের জন্যে ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিনসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জরুরি প্রয়োজন। তাছাড়া আইসিইউ চালু হলেও নেই জনবল। তিনি আরো বলেন, হাসাপাতালে এখন প্রতিদিন ৪শ’ রোগী প্রতিনিয়ত থাকছে। তাই সভাপতিকে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় জনবল সমস্যাটি মেটানোর আহ্বান জানান। তিনি বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সভার সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনার ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রতিকার চান। এর পরপরই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত এসআই বিল্লালের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতির ব্যাখ্যা চান। এ বিষয়ে প্রথমে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নিকট ওই রাতের ঘটনা শুনতে চান।

এ সময় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত এসআই বিল্লাল অসুস্থতার কারণে এই হাসপাতালে রাত পৌনে ৯টায় ভর্তি হওয়ার পর বেশ ক’টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এর ফাঁকে তাঁর শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। এ ঘটনা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায় হাসপাতালে চলে আসেন এবং একের পর এক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কারো কাছ থেকে ন্যূনতম কোনো মানবিকতা বা সহযোগিতা পাননি। এক পর্যায়ে এই হাসপাতালে একজন ডিউটি ডাক্তার সবকিছু জেনেশুনেও একজন কনসালটেন্টের সাথে পরামর্শ করেননি।

তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন, একজন সরকারি কর্মচারী বা পুলিশের একজন এসআই মুমূর্ষ অবস্থায় রাত পৌনে ৯টায় ভর্তি হয়ে পৌনে ১টায় মৃত্যুবরণ করেন। জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি। শুধু তাই নয়, আমার এই কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর শুনে আমি যে পোশাক শরীরে ছিলো সেই পোশাক পরে হাসপাতালে তাৎক্ষণিকভাবে চলে আসি। এরপর ১ ঘন্টা অবস্থান করার পরও কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তাকে খুঁজে পাইনি।

এসব বিষয়ে শুনে সভার সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমি আশ্চর্য হলাম, কোনো রোগী গুরুতর অসুস্থ হলে তার যথার্থ চিকিৎসার প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্যে কোনো কনসালটেন্টকে ডিউটি রোস্টারে বা অনকলে পরামর্শ করার ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, একই ভবনে একটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল, অথচ সমন্বয়ের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। এটি কেনো? এ বিষয়টি লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। এই সমন্বয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজেরও দায়িত্ব বোধ রয়েছে, তেমনি হাসপাতালেরও রয়েছে। এই দুপক্ষের দায়িত্ববোধটুকুর অবস্থা দেখে আমি হতাশ।

তিনি বলেন, জেলার একজন সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা বা পুলিশ সুপার তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তার চিকিৎসা সেবার জন্য যোগাযোগ করেও কাউকে পাননি। দায়িত্বশীলদের এমন উদাসীনতা কেনো? হাসপাতালের চিকিৎসার মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন একের পর এক করে যাচ্ছি, অথচ আপনারা দায়িত্ব অবহেলা করছেন, এটা কেনো?

তিনি বলেন, জেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এটি, অতএব আগামী দিনে একজন সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কারো কাছ থেকে যেনো এ হাসপাতাল সম্পর্কে আর কোনো অভিযোগ শুনতে না পাই।

তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি একজন চিকিৎসক হয়ে আপনাদের অনেক বিষয় সাধারণভাবে মেনে নিয়েছি, আর একটি বিষয়ও মেনে নিবো না। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কারা কারা আছেন, কারা ১০টায় এসে ১২টায় চলে যান, কারা দায়িত্ব পালন করেন না-তাদের তালিকা চাই।

তিনি বলেন, সরকার আপনাদের বেতন দিচ্ছে জনগণের সেবা দেয়ার জন্যে, অথচ আপনারা এখানে নেতাগিরি করবেন-তা চলবে না।

তিনি বলেন, দেশের মেধাবী সন্তানরা চিকিৎসক হয়। এদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা, অথচ আমি ডাক্তার হিসেবে বলতে লজ্জা লাগে, আমরা চিকিৎসকরা মনে হয় আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে পুলিশ সদস্য এসআই বিল্লালের মৃত্যুর বিষয় কাদের গাফলতি রয়েছে এবং কাদের দায়িত্ব অবহেলা ছিলো এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্যে বলেন। তিনি হাসপাতালে প্রতি মুহূর্তে রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্যে শুধু মেডিকেল অফিসার নয়, সার্বিকভাবে ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্যে কনসালটেন্টদের তালিকা বা রোস্টার এবং অনকল চালু করার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, সকল ডাক্তারের নাম ও মোবাইল নাম্বার যা হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেগুলো তালিকা করে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেন।

সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, সিভিল সার্জন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহারসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়