বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ারই নেতা নন, তিনি ছিলেন সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা। বঙ্গবন্ধু শোষিত মানুষের পক্ষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু আমাদের সোনার বাংলা গড়ার পথ দেখিয়েছেন। বাঙালির চাওয়া, তাদের দাবি, আশা ও আকাঙ্ক্ষা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাই তাঁকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ারই নেতা নন, তিনি ছিলেন সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা।

তিনি ১৫ আগস্ট সোমবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান, পিবিআই চাঁদপুর-এর পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভিন, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।

আরো বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন দৈনিক সুদীপ্ত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এমআর ইসলাম বাবু। বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন কালেক্টরেট জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওঃ মোঃ মোশারফ হোসাইন। আলোচনা শেষে শিশু একাডেমির সহযোগিতায় জাতীয় শোক দিবসে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ দীপু মনি এমপি আরো বলেন, আজকে আমরা জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলি আর যাই বলি, বঙ্গবন্ধু সবকিছুই আমাদের জন্যে করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শোষণের হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছিলেন। দেশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যা যা করার দরকার তাই-ই করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্যে তিনি সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। তিনি যত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তার সুফল আজ আমরা পাচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন, আজকে বৈশি^ক একটি সমস্যা চলছে। কোভিড থেকে বেরিয়ে আসার পথে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্যের সঙ্কট চলছে। ভবিষতের কথা ভেবে আমাদেরকে সাময়িক কষ্ট হলেও এ সমস্যা মেনে নিতে হবে। তবে এ সমস্যা ইনশাল্লাহ আমরা কাটিয়ে উঠব।

তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যতটুক মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক তার বেশি মূল্যবৃদ্ধি আমরা যেন না করি। এই সময়টা মুনাফা করার সময় নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াবার, দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হবার সময়। এই যে লোডশেডিং চলছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সঙ্কট উত্তরণের জন্য কাজ চলছে। শুধু আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে ঠিক যেমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিলো, এখনো সেই একাত্তর, ’৭৫, ২০০৪, ২০১৩-১৪ সালের ঘাতকেরা সক্রিয়। তারা আবারও সেই রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। এমনকি তারা আস্ফালনও করছে আরেকটি ’৭৫ ঘটাতে চায়।

তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সবার রাজনৈতিক অধিকারে বিশ্বাস করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা আরেকটি ’৭৫ ঘটানোর অপচেষ্টা চালাবে, দেশে নাশকতা করবে, অস্থিতিশীলতা করবার জন্যে নানা অপচেষ্টা চালাবে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ চুপ করে বসে থাকবে না।

ডাঃ দীপু মনি বলেন, এই অপশক্তির নানান রকম জোট হচ্ছে। প্রত্যেকবার নির্বাচন আসলে আমরা তাদের সার্কাস দেখি। এরা কারা? যারা সংকটের মুহূর্তে আজ পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এই চেহারার মানুষগুলোর রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি কোথা থেকে। তারা কি দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে কোনোদিন যুক্ত ছিল ? এরা তো চিরদিনই ষড়যন্ত্রকারী এবং ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এদেরকে।

মন্ত্রী বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সেনাপ্রধানের অবৈধ ক্ষমতার দখলকে বৈধতা দেয়ার জন্যে উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তারা এখন আওয়ামী লীগ সরকারকে আন্দোলনের, রাজপথের ভয় দেখায়। যে আওয়ামী লীগের জন্ম মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, যে আওয়ামী লীগের কারণে আমরা ভাষা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন পেয়েছি, সেই সংগঠনকে ভয় দেখায় অবৈধ ক্ষমতা দখলদারদের পকেট থেকে জন্ম নেয়া বিএনপি এবং তাদের দোসরেরা।

মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি কী করে স্বাধীনতার চেতনাকে একে একে ভুলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতিকে আমাদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে, তাদেরকে এনে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের যারা ক্ষমতায় বসায়, তারা আর যাই হোক, স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ হতে পারে না। আমাদের শহীদের রক্তের অবমাননা ও বেঈমানি করে তারা এই কাজগুলো করেছে। একই সঙ্গে তারা ২১ বছর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে জঘন্য অপপ্রচার করেছে।

অতএব আমি আশা করবো বাংলাদেশের সকল মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যে সমস্ত নাশকতাকারী ঘাতক অপরাজনীতির অপশক্তিগুলোকে প্রতিহত করবেন এবং তার মাধ্যমে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। এতে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারবো। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা সত্যিকার অর্থে তা দেখতে পারবো।