মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪

কৃষিপণ্য বিপণনে সরকারি সহযোগিতা দরকার

অনলাইন ডেস্ক
কৃষিপণ্য বিপণনে সরকারি সহযোগিতা দরকার

'মধ্যস্বত্বভোগীদের পোয়াবারো : ৬ টাকা কেজির কুমড়া দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়!'--এটি গতকালকের চাঁদপুর কণ্ঠের শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম। সংবাদটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, হাজীগঞ্জে এবার কুমড়ার বাম্পার ফলন ফলেছে। কিন্তু বরাবরের মতো ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। পুরো সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষক জমিতে যে কুমড়ার কেজি বিক্রি করছে ৬/৭ টাকায়, সেই কুমড়া বাজারে এসে কেজি হয়ে যাচ্ছে ২৫/৩০ টাকা। কেজি প্রতি ২০/২২ টাকার পুরো লাভ নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালাল চক্র। এদিকে প্রয়োজনীয় দাম না পাওয়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করে কৃষকরা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আসছে মৌসুমে আর কুমড়া চাষ করবো না।

সরজমিনে উপজেলার কুমড়া চাষে প্রসিদ্ধ গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পলিমাটিতে সমৃদ্ধ উচ্চগাঁ, বলাখাল, শ্রীনারায়ণপুর, অলিপুর, সাতবাড়িয়া, মহেশপুরসহ তৎসংলগ্ন গ্রামগুলোতে বহু বছর ধরে শীতকালীন সবজি, মিষ্টি ও বর্ষা কুমড়ার ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। অতীতের সকল বছরের চেয়ে এবারে এ অঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন ফলেছে। ইতোমধ্যে কুমড়ার ফলন তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। হাজীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মৌসুম ভিত্তিক নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর, তাই শাকসবজি আবাদে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষককুল। এখন বিক্রয় হওয়ার সময়। প্রতি বছর এ সময়ে জমিনের প্রায় ৬০ শতাংশ কুমড়া বিক্রয় হয়ে যায়। এবার সেটা হয় নি।

একাধিক কৃষক জানান, জমি থেকে পাকা কুমড়া তুলে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখলে পাইকাররা এসে তা কিনে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণত সাইজ ভেদে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকি। বড়ো বড়ো পাইকাররা আমাদের কুমড়া ট্রাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। তবে এ বছর পাইকাররা এখনো ঠিকমতো আসছে না। আরো ১০/১৫ দিনের মধ্যে কুমড়াগুলো বিক্রয় করতে না পারলে কুমড়া চাষের চালান আসবে না, আর কুমড়ার জমি ভেঙ্গে জমিতে পানি ঢুকিয়ে ইরি-বোরো রোপণ করতে হবে। কৃষক আবু বকর ছিদ্দিক, সফিক গাজী ও জুলফু মিয়া জানান, প্রতিবছর উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হতো না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে পুরো জমির কুমড়া কিনে নিতো। কিন্তু এবার এখনো বড়ো পাইকার আসছে না। স্থানীয় বাজারে আমরা যে কুমড়া ৬/৭ টাকায় কেজি বিক্রি করি, আমাদের চোখের সামনে দোকানিরা সেই কুমড়া কেটে কেজি প্রতি বিক্রি করছে ২৫/৩০ টাকায়।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, এ বছর হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৬১৮ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। তবে অন্যবার থেকে এবারে পাইকারী ক্রেতা কিছুটা কম বলে জানতে পেরেছি। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, আশা করবো কৃষকরা নিজেরা পাইকারী বাজারে নিয়ে তাদের পণ্য বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় দাম পাবে।

আমাদের দেশের সরকারি কৃষি বিভাগ কৃষককে বিনামূল্যে উপকরণ দিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে এবং আনুষঙ্গিক কিছু সুবিধা নিশ্চিত করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের বিপণনে সহযোগিতা করে না বললেই চলে। এটা সর্বস্তরের কৃষকদের জন্যে অনেক হতাশার। কৃষি বিভাগের জনসংযোগ বিভাগ যদি এ ব্যাপারে সকল গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানান দেয়, তাহলে ব্যাপক প্রচার হয়। কিন্তু নিজেদের সীমিত প্রচার সংখ্যার প্রকাশনায় লিখে তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করে। এটা কি যথেষ্ট? মোটেও নয়। যার ফলে কোনো নির্দিষ্ট ফসলের বাম্পার ফলন হলেও প্রচারের অভাবে সেটির বাম্পার বিক্রি হয় না। এবার হাজীগঞ্জে কুমড়ার বাম্পার ফলন হবার পরও পূর্বের ন্যায় বিক্রি না হবার বিষয়টি কৃষকের জন্যে অনেক কষ্ট ও বেদনার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষককে সরাসরি বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে কুমড়া বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই পরামর্শের পাশাপাশি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিভিন্ন বাজারে বিনা খরচে কুমড়া পৌঁছানোর মতো পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন। কিন্তু সেটি তাদের মাথায় নেই কিংবা ফাইল চালাচালির দীর্ঘসূত্রিতায় কষ্টকর বলার অজুহাত নিশ্চয়ই প্রস্তুত। 'প্রয়োজন আইন মানে না' এই চিরন্তন সত্যটি আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশই মানতে চান না সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে। এটা তারা নিজেদের অসততায় সৃষ্ট জটিলতার চেয়েও বড়ো করে দেখেন! কৃষকদের স্বার্থে কিংবা জনকল্যাণে কিছু করে জটিলতায় পড়া এবং সেটা থেকে উত্তরণের প্রয়াসে ঊর্ধ্বতনদের সহযোগিতার চেয়ে অসহযোগিতার নজিরটাই মনেহয় বেশি আছে। এমন নজির চিরতরে নিরসনের জন্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে কিছু করাটা অনিবার্য বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়