প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে কচুয়ার সাচারে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন লাখো ভক্ত। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সাচার জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৪তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার রথ টানার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। এ রথটি এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় রথ উৎসব।
করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পরে রথযাত্রা উৎসবে শামিল হয়েছে কচুয়ার তথা দেশ বিদেশের লাখো লাখো হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্ত। সপ্তাহব্যাপী চলবে এ উৎসব। গত দুবছরে করোনার কারণে কোনও রকম আড়ম্বর ছাড়াই পালিত হয়েছিল রথযাত্রা।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গল আরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগ আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ শেষে বিকেল ৫টায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে রথ টেনে পূর্ব বাজারে আনা হয়। তাছাড়া রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন আসবাবপত্র, খেলনা, প্রসাধনী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রায় ৫শ’ স্টল স্থান পায়।
জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস জানান, গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে আমরা কোনো রকম নিয়ম রক্ষার্থে স্নান যাত্রা ও রথ যাত্রা উৎসব পালন করেছি। আমরা স্থানীয় এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও দেশ বিদেশের জগন্নাথ দেবের ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় জগন্নাথ দেবের পুনঃনির্মিত ভবন নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকের প্রথম রথযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটেছে। তাই এই বিশাল ভীড়কে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক ভলান্টিয়ার কাজ করছে। আমরা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির পক্ষ থেকে সকলকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
রথ উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ গোপ জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এই জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। আজকে প্রথম রথে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগমে জগন্নাথ ধাম মন্দির প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী ৮ জুলাই উল্টো রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়েই এ রথযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শ’ বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে তাকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাইরে আমরণ অনশন শুরু করে দেন। অনশনের ক’দিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদিষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দিঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দেবেন। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দিঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিকভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথের দর্শন লাভ করেন।