প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে গতকাল ১ জুলাই শুক্রবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ পুণ্যার্জনের নিমিত্তে তাদের আরাধ্য ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা দেবীকে সুসজ্জিত রথে আরোহনপূর্বক ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যান। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর শহরে ব্যাপক আয়োজনে পুরাণবাজার গোবিন্দ মন্দির (ইসকন) ও পুরাণবাজার সার্বজনীন জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এ মন্দিরগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হয় জগন্নাথদেবের পূজা, কীর্ত্তনসহ বিশ্বশান্তি, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ ব্যাপক ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
বিকেল ৫টায় হাজারো ভক্ত নর-নারীর ব্যাপক উপস্থিতিতে পুরাণবাজার হরিসভা রোডস্থ সার্বজনীন শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির আয়োজিত সুসজ্জিত ফোল্ডিং রথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি রথযাত্রা অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করেন এবং সুন্দর আয়োজনের জন্যে সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চাঁদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। হাজারো ভক্তহৃদয়ের ধর্মীয় অনুভূতির মধ্যে দিয়ে নারকেল ফাটিয়ে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়। এ সময় অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপারের সহধর্মিণী পুনাকের সভাপতি ডাঃ আফসানা শর্মী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর) আসিফ মহিউদ্দীন পিপিএম, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ, পৌর কাউন্সিলর মালেক শেখ ও মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসি বেগম। জেলা পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, পরেশ চন্দ্র মালাকার, বিমল চৌধুরী, গোপাল সাহা, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, কার্তিক চন্দ্র সরকার, নেপাল সাহা, লিটন মজুমদারসহ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের নেতৃবৃন্দ। উদ্বোধনী পর্বে আগত অতিথিদেরকে স্বাগত জানান সার্বজনীন জগন্নাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সহদেব দেবনাথ, অধ্যক্ষ বিশাল গোবিন্দ দাসাধিকারী, সহ-সভাপতি উমেষ চন্দ্র সাহা, শম্ভুনাথ সাহা, সদস্য মহাদেব দত্ত, বিশ্বনাথ বণিক, ডাঃ প্রদীপ দেবনাথ, টুটন বণিক, খোকন সাহা, নিতাই পোদ্দার প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্ব শেষে ভক্ত নর-নারী রথখানার দড়ি ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম শেষে কালীবাড়ি মন্দিরে (জগন্নাথদেবের মাসিবাড়ি গুন্ডিচা মন্দির) নিয়ে আসেন। এখানেই অনুষ্ঠিত হবে উল্টোরথযাত্রা পর্যন্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
একই দিন বিকেলে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপারসহ জেলা পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে পুরাণবাজার ঘোষপাড়া গোবিন্দ মন্দির (ইসকন) আয়োজিত রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অতিথিদেরকে স্বাগত জানান গোবিন্দ মন্দির ইসকনের জেলা সভাপতি জগদানন্দ পণ্ডিত দাস ব্রহ্মচারী, রথযাত্রা উদ্যাপন কমিটির শ্রীমান রত্নেশ্বর গৌর হরিদাস ও শ্রীমান নিতাই ভগবান দাস।
পরে শত শত ভক্ত নর-নারী পুণ্যার্জনের নিমিত্তে রথের দড়ি ধরে রথখানা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নতুনবাজার গোপাল জিউড় মন্দিরে (জগন্নাথদেবের মাসী বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে) নিয়ে আসেন। এখানেই উল্টোরথযাত্রা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে পাঠ কীর্ত্তনসহ ব্যাপক ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
এছাড়া পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স ও শহরের নতুনবাজার গোপাল জিউড় আখড়ায় রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে গোপাল জিউড় আখড়ার রথখানা ভক্ত নর-নারী শহরের মেথা রোডস্থ দুর্গা মন্দিরে নিয়ে রাখেন এবং হরিসভা মন্দিরের রথখানা হরিসভা চত্বরেই শত শত ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়ে সুসজ্জিত রথের দড়ি ধরে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যান।
রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পুরাণবাজার হরিসভা রোডস্থ শ্রীশ্রী রাধা মুরারী মোহন জিউড় মন্দিরে। এদিন সকাল থেকেই এ মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথদেবের পূজা, কীর্তন, অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণ, শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, সন্ধ্যা আরতি কীর্তনসহ বিভীন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
রথযাত্রা উপলক্ষে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। হাজারো ভক্ত নর-নারী নেচে গেয়ে জয় জগন্নাথ ধ্বনি দিয়ে রথথানা এগিয়ে নিয়ে যান। রাস্তার দুধারে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শত শত মানুষ রথের শোভাযাত্রা অবলোকন করেন এবং হিন্দু ভক্তবৃন্দ দুহাতে জগন্নাথ দেবকে প্রণামসহ ভক্তি নিবেদন করেন। এ সময় রথ থেকে জগন্নাথদেবের প্রসাদ হিসেবে কলা, কাঁঠাল, নারকেল, বাতাসা বিলিয়ে দেওয়া হয়। আর ভক্তহৃদয় মহাআনন্দে তা গ্রহণ করে নিজেদেরকে গৌরবাম্বিত মনে করেন। দীর্ঘ দু বছর ব্যাপক আয়োজনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে না পারায় গতকালকের প্রথম দিনের রথযাত্রা ছিল খুবই দর্শনীয়। ধর্মীয় বিধানমতে এদিন ভগবান জগন্নাথ দেব নিজের ভ্রাতা বলরাম ও ভগ্নি শুভদ্রা দেবীকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নামেন ব্যস্ত ভক্তদেরকে দর্শন দেয়ার জন্যে। আর কর্মব্যস্ত ভক্তগণ ঘরে বসে ভগবান দর্শন করতে পেরে প্রীত হন।