সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২২, ০০:০০

দৃষ্টিনন্দন ভাষাবীর এম. এ. ওয়াদুদ সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় দুপাড়ের লাখো মানুষ
প্রবীর চক্রবর্তী ও মামুনুর রশিদ পাঠান ॥

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে সরকার প্রবহমান নদীর ওপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। ফলে শুধু দুই পাড়ের অধিবাসী নয়, সেতু সংযোগকারী সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা উপকৃত হয়। উন্নয়ন হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারার। কিন্তু নির্মাণাধীন সেতুটির যদি কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় থাকে, তাহলে দেখা যায় উল্টো চিত্র। মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

যেমনটি হয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মাণাধীন ভাষাবীর এম.এ. ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৫ বছরেও সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতুর সুফল পাচ্ছে না দুই পাড়ের লাখো মানুষ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নির্মাণ কাজে ধীরগতি। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধির দাবি, কাজ ঠিকমতই এগুচ্ছে।

এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চর রণবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বগার গুদাড়া এলাকা দিয়ে ২শ’ ৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এম. এ. ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই সংসদীয় আসনের এমপি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। চাঁদপুর-হাইমচর আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পিতা ভাষাসৈনিক মরহুম এম.এ. ওয়াদুদের নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়।

৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ টেড্রার্স লিঃ সেতুটির মূল অংশ নদীর উপরের কাজটি সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্যে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণ কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন ২০২৩ পর্যন্ত করা হয়।

সরেজমিন সেতুর নির্মাণ কাজ এলাকায় গেলে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর ওপর মূল সেতুটি নির্মাণ শেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ অংশের কাজ চলছে ধীর লয়ে। এরপর শুরু হবে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ। গত এক বছর পূর্বে সেতু নির্মাণস্থলে যে চিত্র দেখা গেছে, এক বছর পর সেই তুলনায় কাজের অগ্রগতি সামান্যই। মূল সেতুর কাজ আরো আগেই শেষ করে প্রথম নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ গুটিয়ে চলে গেছে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া এসিসহ আসবাবপত্র কোনো কিছুরই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ডকইয়ার্ডে এবড়োথেবড়ো ভাবে পড়ে রয়েছে জিনিসপত্রাদি। কাজের ধীরগতির কারণে নির্মাণ করা পিয়ারের ওপরের রডগুলোতে মরিচা ধরেছে।

সেতুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৬ জন শ্রমিক সেতুর ভায়াডাক্টের পিয়ারের ক্যাপের কাজ করছে। অপর পাড়ের পিয়ারের ক্যাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী কামরুল হাসান।

প্রকৌশলী কামরুল হাসান জানান, সেতুর দুই পাড়েই নির্মাণ কাজ চলছে। চাঁদপুর সদর অংশে ২৫ জন এবং ফরিদগঞ্জ অংশে ৯ জন শ্রমিক কাজ করছে। তবে কাজের ওপর শ্রমিক বাড়ে ও কমে।

সাইটের ফোরম্যান নেয়ামত আলী জানান, তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্য প্রজেক্ট থেকে ১৫ দিন পূর্বে এখানে এসেছেন। আশা করছেন কাজের গতি বাড়বে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি)-এর প্রজেক্ট পরিচালক অপুকে এই বিষয়ে তার মুঠোফোনে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আকবর মিয়াজী, চর রণবলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন (৩৮), খোরশেদ আলম (৬০), জুয়েল হোসেন টিটু (৩৫), আলাউদ্দিন (৩৪), মিজান (৬০), শফিকুর রহমান (৭০)সহ বেশ ক’জন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে কাজ করছে মনে হয় আগামী দু-তিন বছরেও কাজ শেষ হবে না। কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ভায়াডাক্টের পিয়ারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। ঠিকমতো এখানে নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও আর্থিক সমৃদ্ধির জন্যে এই সেতুটি আমাদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এর সুবিধা আমরা ভোগ করবো কি না জানি না।

তারা জানান, সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালে শুরু হলেও সাইটের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ফলে ৬ বছরেও দুই পাড়ের এলাকাবাসী স্বপ্নের সেতুটিতে চলাচল শুরুর দৃশ্যটি চোখে দেখছে না। তারা অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় কাজের ঠিকাদার সামান্য কাজ করেই বিল উঠিয়ে চলে যান। আবার কয়েকমাস পরে এসে কাজ শুরু করেন। এছাড়া মরিচা পড়া রডের মধ্যেই পরে এসে তারা ঢালাই দিচ্ছে। ফলে এগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েই জনমনে প্রশ্ন উঠেছ। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি ঠিাকাদারের গাফিলতির কারণে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এই দাবি জনসাধারণের।

বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীর লয়ে কাজ করছে। বিষয়টি এলজিইডি চাঁদপুর অফিসকে জানানো হয়েছে। সেতুটি যানচলাচলের জন্যে উন্মুক্ত হলে দ্ইু পাড়ের জনগণের চলাচলের সুবিধা ছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে।

নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইউব খান জানান, নির্মাণ কাজের গতি বেড়েছে। ডিসেম্বর ২২-এর মধ্যে সেতুটির সকল কাজ শেষ হবে।

এ ব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস হোসেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভাষাবীর এম. এ. ওয়াদুদ সেতুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ সালে শেষ হয়। পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুন ২৩ পর্যান্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২-এর মধ্যে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার আশা করছি। অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা সেতুটি যান চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করতে পারবো। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাজে সামান্য ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে গতি ফিরেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়