প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২২, ০০:০০
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে আলোচিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ভোট। নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই হয়। ১শ’ ৫ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন। নৌকা ও ঘড়ির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। মাত্র ৩শ’ ৪৩ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
কুসিক নির্বাচনে আরফানুল হক রিফাতের নৌকা পেয়েছে ৫০,৩১০ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু টেবিলঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯,৯৬৭ ভোট।
ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু ভোগান্তি ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নতুন নগরপিতা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই স্বস্তিতে থাকবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ এটি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রথম ভোট। এ নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জালভোটসহ নানা অনিয়মের কারণে ক’জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানাসহ সাজা দেয় দায়িত্বে থাকা সংক্ষিপ্ত বিচারিক আদালত। সকালে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু সকাল ৯টার পর বৃষ্টির হানায় ভোটারদের কেন্দ্রে আসার গতি ধীর হয়ে যায়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে আরও দু দফা বৃষ্টিতে কিছুটা ভোটার কম আসে।
১৫ জুন বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা র্পযন্ত ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা সিটির এটি তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে ২০১২ সালরে ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটির প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ভোট হয়েছিলো ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ।
এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় সব কেন্দ্রেই ছিলো ইভিএমজনিত ধীরগতি। ধীরগতিতে ভোট পড়ায় দিন শেষে লম্বা সারিতে অপেক্ষা করেন ভোটাররা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের ধারণা না থাকার বিষয়টি। এজন্যে ভোটাররাও বেশি সময় নিচ্ছেন বলে একাধিক প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন।
মেয়র প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ ও ইতিবাচক বলেছেন। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে শুধু নৌকা প্রতীক থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রার্থীকে অভিযোগ করতে দেখা যায়নি।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রিফাত ১১নং ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। ‘জয়ের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নরে জবাবে তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
অপরদিকে, সকাল সাড়ে ৯টায় নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু ১২নং ওয়ার্ডের হোচ্ছামিয়া বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিস্থিতি ভালোই দেখেছি। তবে ইভিএম খুবই স্লো। এ কারণে ভোটগ্রহণ দেরি হচ্ছে। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মোঃ রাশদেুল ইসলাম (হাতপাখা), স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) ও মোঃ মনিরুল হক সাক্কু (সাবেক বিএনপি নেতা ও দুবারের সাবেক মেয়র) ঘড়ি ও মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া)।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে প্রার্থীর সংখ্যা ছিলো ১শ’ ৪০ জন। ৫ ও ১০নং ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯শ’ ২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮শ’ ২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।