প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেছেন, চাঁদপুর শহরের খেলার মাঠগুলো উন্মুক্ত করে খেলার উপযোগী করে দেয়া এখন সময়ের দাবি। আমি পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে সময়ের এই দাবির সাথে একমত পোষণ করছি। তিনি পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আসন্ন বাজেটে পৌর নাগরিকদের সন্তানদের জন্যে শিক্ষা বৃত্তি এবং ব্ল্যাড ব্যাংক চালু করা হবে। তিনি গতকাল ১৪ জুন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প-৩ (টএওওচণ্ড৩)-এর আওতায় নগর পরিচালনা উন্নতিকরণ কর্মসূচি (টএওঅচ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর সমন্বয় কমিটির (ঞখঈঈ)-এর প্রাক বাজেট সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম হাওলাদারের উপস্থাপনায় সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন পৌরসভা মসজিদের খতিব মাওঃ জাকির হোসেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। পরে নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যে পৌরসভার উন্নয়নমূলক অবকাঠামোগত কাজগুলো আরো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানান।
নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত পিএইচএফ তাঁর বক্তব্যে চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ লেকের পশ্চিম পাশের সাবেক সিএনজি স্ট্যান্ড হয়ে রেললাইনের উপর লেভেল ক্রসিং দিয়ে আদালত পাড়া সড়কের সংযোগ, পালবাজার-বকুলতলা সড়কের রেল লাইনের ওপর লেভেল ক্রসিং দিয়ে চাঁদপুর বড় স্টেশন অভিমুখী সড়কের সংযোগ সুবিধা এবং লঞ্চঘাট অভিমুখী বিকল্প সড়ক করার জন্যে পৌর মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি শহরের পাড়া মহল্লার সড়কগুলো প্রশস্তকরণের জোর দাবি জানান। তিনি তাঁর বক্তব্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চাঁদপুর পৌর এলাকায় বাংলাদেশ রেলওেয়ের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বিক্ষিপ্ত ও পরিত্যক্তভাবে পড়ে রয়েছে। এগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে লাগানোর জন্য পৌর মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভায় নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন বড় স্টেশন টু ওয়্যারলেস মোড় পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ, আল-আমিন একাডেমীর পূর্ব পাশের শিশু পার্কটি সংস্কার ও উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেন।
সভায় এছাড়া বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য রাধা গোবিন্দ গোপ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বিলকিস বেগম, শিল্পী রাণী ঘোষ ও ফাতেমা আক্তার বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে পৌর মেয়র রোটাঃ কাজী শাহাদাতের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে লেকেরপাড়ের পশ্চিম পাশের সাবেক সিএনজি স্ট্যান্ড হয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে আদালতপাড়ার সাথে সংযোগ সড়ক ও পালবাজারের বকুলতলা সড়কটি রেললাইনের ওপর দিয়ে লেভেল ক্রসিং দিয়ে শীঘ্রই চালু করার জন্যে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তিনি প্রফেসরপাড়া-মমিনপাড়া হয়ে লঞ্চঘাট পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণে পৌর পরিষদের পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান। তিনি রেলওয়ে সম্পত্তি পৌর নাগরিকদের কাজে ব্যবহারের বিষয়ে বলেন, চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ সরকারের রেল মন্ত্রীকে চাঁদপুরে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হবে এবং সুধীজনদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় করা হবে।
তিনি পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে বলেন, চলতি বছরের মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি স্থানে ৪টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি ব্লাড ব্যাংক স্থাপন, পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে শিক্ষা বৃত্তি চালু করা হবে।
তিনি চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে ইচলী-ঢালীঘাট ব্রীজ নির্মাণ করা হবে এবং এটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠকে বিকেলে খেলার জন্যে উপযোগী করে উন্মুক্ত করে দেয়া এখন সময়ের দাবি বলে একাত্মতা প্রকাশ করে। তিনি চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম দিকে রেলওয়ে কোয়ার্টারের সম্মুখস্থ মাঠটি পুনরুদ্ধারে প্রয়াস চালাবেন বলে জানান।
তিনি পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠকে খেলার উপযোগী করার আশ্বাস দেন। পুরাণবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ এবং উন্মুক্ত মঞ্চ করে দিবেন বলে সভায় আশ্বস্ত করেন।
তিনি পুরাণবাজার ও নতুনবাজার এলাকায় লাশ সংরক্ষণ ঘর এবং লাশ ধৌতকরণ ঘর করা হবে বলে সভায় জানান। এছাড়া ট্রাক রোডের সংযোগ রক্ষা করে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের জন্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল বড়স্টেশন ক্লাব রোড-টিলাবাড়ি এলাকার খালের মাঝামাঝি স্থানে একটি ঘাটলা করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এছাড়া শহরের খাল সংস্কার ও খাল উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরাণবাজার নাপিত বাড়ি খালটি উদ্ধারকে আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি, দুপাশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে, আমরা খাল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করলে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেবেন বলে দখলদারদের জানিয়েছি।
তিনি চাঁদপুর পৌর এলাকায় চলমান উন্নয়ন কাজ প্রসঙ্গে বলেন, এই কাজগুলো ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবার কথা। কিন্তু মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারগণ কাজ করতে চায়নি। এক পর্যায়ে ঠিকাদারদের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কাজগুলো শুরু করা হয়েছে। আশা করছি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। তিনি উন্নয়ন কাজ চলাকালীন নাগরিকদের ভোগান্তির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
নগর সমন্বয় কমিটির সভায় সদস্যগণ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী, টাউন প্ল্যানারসহ কর্মকর্তাণ্ডকর্মচারী ও পৌরসভার সিনিয়র সিটিজেনগণ উপস্থিত ছিলেন।