সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুরে দুর্লভ হলুদ ড্রাগন চাষে বাণিজ্যিক সাফল্য
মির্জা জাকির ॥

বিশ্বখ্যাত বেশ কয়েক ধরনের ড্রাগনের সফল ফলন হয়েছে এবার চাঁদপুরের আলোচিত ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে। প্রতিদিন শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ আসছে এখানে উৎপাদিত নানা জাতের এসব ড্রাগন ফল দেখতে। বিশেষ করে বিভিন্ন জাতের ড্রাগন উৎপাদন ও তার সফল ফলন এই ফ্রুটস ভ্যালিতে ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে। দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন তাঁর পৈত্রিক বিশাল আকারের পরিত্যক্ত ইটভাটায় সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে বিদেশি নানাজাতের ফল উৎপাদন করে ইতোমধ্যে বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে এবার দুর্লভ জাতের হলুদ ড্রাগন চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম সফল ফলন করেছেন। এই দুর্লভ জাতের হলুদ ড্রাগন, যা বিশ্বে ‘কুইন অব ড্রাগন’ হিসেবে খ্যাত। বাজারে প্রচলিত হলুদ রংয়ের ড্রাগনের সাথে এর মিল নেই। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। মিষ্টতা অনেক বেশি ও রসালো।

চাঁদপুর সদরের শাহতলীতে অবস্থিত ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে মোট ৭ জাতের ড্রাগন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন বিশ্বখ্যাত তিন জাতের হলুদ ড্রাগন এই দেশের ড্রাগন চাষীদের মুখে হাসি ফুটাবে বলে মনে করেন এখানকার কৃষিবিদরা। এই জাত হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ফলের জাত। প্রথমবারের মত দেশে হলুদ ড্রাগনের নতুন জাত বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত আইসিস গোল্ড, গোল্ডেন ইয়েলো এবং পিটাহায়া ইয়েলো জাতের ফলন একমাত্র চাঁদপুরের ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতেই হয়েছে। অপর দুটি অস্ট্রেলিয়ান ও ফিলিপাইনের জাত। একই সাথে লাল এবং ক্ষয়েরী রঙের আমেরিকান ব্রাউন বিউটি এবং লা ভার্ন রেড হাইব্রিড ড্রাগনের ফলনেও সফল হয়েছেন।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, এই ৪টি ড্রাগন এদেশে নতুন জাত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারো কারো কাছে এসব জাত থাকলেও পরীক্ষামূলক সফল বাণিজ্যিক ফলন এই প্রথম। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। এছাড়া এখানে উৎপাদিত লাল ড্রাগনের নতুন দুটি জাত এদেশে প্রচলিত লাল ড্রাগনের মত হলেও সাইজ, রং, আকার, চেহারা এবং স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত অন্যান্য ড্রাগন ৪০০ গ্রাম থেকে ৯০০ ওজনের হয়ে থাকে। তবে গাছের বয়স ৩ বছর ছাড়িয়ে গেলে আইসিস জাতের একেকটি ড্রাগন ১ কেজি ওজন ছাড়িয়ে যাবে। ড্রাগনের এই জাতটা ঠাণ্ডা তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় শীতকালেও ড্রাগনের চাষাবাদের মাধ্যমে ড্রাগনের প্রাপ্যতা ধরে রাখার আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোক্তা।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর ম্যানেজার সোহান চৌধুরীসহ অন্য স্টাফরা বলেন, সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে আমরা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর চাষাবাদ করেছি। ড্রাগন গাছের পরিচর্যা একটু বেশি করতে হবে। তাহলে ভালো ফলন আসবে। গত তিন মাস আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং পরিশ্রম করেছি। যেমন, কচুরিপানা দিয়ে রেখেছি, মাটি একত্রিত করে নিয়মিত পানি দিতে হয়। এছাড়া মিলিবাগ পোকা, মাকড়সাসহ বিভিন্ন প্রকার পোকায় আক্রান্ত হয়। আমরা সব সময় সে বিষয়গুলো দেখে রেখেছি।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে ঘুরতে আসা সনাক-চাঁদপুরের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত বলেন, আমি এর আগে বেশ কয়েকবার লাল ড্রাগন খেয়েছি। আজকে এই হলুদ জাতের ড্রাগন খেলাম। তবে এর আগে অন্য ড্রাগনে আমি এত স্বাদ পাইনি। হলুদ ড্রাগন খেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি বিরল স্বাদের ড্রাগন। আজকে এখানে না আসলে হয়তো জানতেই পারতাম না এই জাতটি এত সুস্বাদু। এসব জাতও এদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে চাষাবাদ উপযোগী তা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে দেখা যাচ্ছে।

সারা বিশ্বে আইসিস ড্রাগনকে সুপারফুড বিবেচনা করে ‘কুইন অব ড্রাগন’ নামে ডাকা হয়। সেই আইসিস গোল্ড ড্রাগনও এই ফ্রুটস ভ্যালিতে সফল ফলন হয়েছে। এই ড্রাগন মিষ্টি এবং সাইজে বড় ও একই সাথে অন্য সাইট্রাস স্বাদের অধিকারী। এর পুষ্টিগুণ অন্য সব ড্রাগনের তুলনায় অনেক বেশি।

চাঁদপুরে ড্রাগন ফলের অপার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, আমি শাহতলীর ফ্রুটস ভ্যালিতে গিয়েছি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নানা জাতের ফলের উৎপাদন হচ্ছে এখানে। ড্রাগন ফল এখন শাহতলীর ফ্রুটস ভ্যালি ছাড়াও মতলব, ফরিদগঞ্জ, কচুয়াসহ নানা স্থানেও চাষ হচ্ছে। এখন ড্রাগন ফলের মওসুম চলছে, তাই দামও হাতের নাগালে। তবে হেলাল সাহেবের ফ্রুটস ভ্যালিতে উৎপাদিত ভিন্ন জাতের ড্রাগন ফলন এই জেলার উদ্যোক্তাদের ড্রাগন চাষে আগ্রহী ও আশান্বিত করবে বলে আমি মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়