প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২২, ০০:০০
নির্মাণের যৌক্তিকতা :
বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা নামে ছোটে
গঙ্গা-গর্ভে জন্ম নিয়ে মেঘনা-খামে লোটে
দক্ষিণে আর পশ্চিমে তার একুশ জেলার হাল
পারাপারের ঝুট-ঝামেলায় হারায় বেলার তাল।
ফেরির জন্যে ভিড়ের মাঝে দিন হয়ে যায় রাত
অ্যাম্বুলেন্সে জ্যান্ত রোগী হয় মরে হায় কাত
উন্নয়নের চাকার গায়ে যায় ধরে জং তাতে
দখিন পাড়ের মানুষ ভোগে সংকটে-শঙ্কাতে।
বৃষ্টি-বাদল ঘূর্ণিঝড়ে অচল পড়ে থাকে
এমনি করে দুর্যোগে তা অবল করে রাখে
মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দখিন তীরের মেয়ে
জানেন কঠিন পদ্মা-পাড়ি যোদ্ধা-বীরের চেয়ে।
তাইতো তাঁরই শপথ হতে স্বপ্ন এলো চোখে
পদ্মানদীর সেতু হবে জানতে পেলো লোকে
ঘাত-প্রতিঘাত অনেককিছু সহ্য-শ্রদ্ধা হেতু
এই পৃথিবী সত্যি পেলো প্রাণের পদ্মাসেতু।
নির্মাণকার্যের কৌশল :
পদ্মা হলো অনেক গভীর যায় না পিলার নিচে
প্রকৌশলী-মিস্তিরিরা ছাড়ল না হাল পিছে
কৌশলে তাই সবাই মিলে বুদ্ধি দিয়ে ঘিরে
বাড়ায় মাটি নদীর তলে ধৈর্যে ধীরে ধীরে।
পদ্মা হলো খরস্রোতা কীর্তি করে নাশন
তাইতো আগে করতে হলো পদ্মানদী শাসন
এই সেতুকে কাজের জন্যে করলো বহুমুখী
অনেক রাতের পরেই ভোরের অরুণ দিলো উঁকি।
রেলের গাড়ি পারাপারে পাত বসানো হলো
সেতুর সকল পিলারজুড়ে বাড়তি হলো বলও
হেঁটে কিংবা সাইকেলে আর পার হতে তা মানা
পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য হলো ছয় কিমি একটানা।
সেতুর বুকে স্প্যানই আছে একচল্লিশটা পুরো
ভাঙবে না তা ভূমিকম্পে করবে না হুড়মুড়ও
দু’দিক থেকেই চলবে গাড়ি চওড়া তা ষাট ফুটে
মচকাবে না যুদ্ধসেনার কুচকাওয়াজের বুটে।
ষড়যন্ত্র ও পদ্মাসেতু :
জন্মকালের অনেক আগেই ষড়যন্ত্রের চালে
বিরোধীরা ছিটায় কাদা জয়-তরণীর পালে
দুর্নীতিরই অপবাদে বিশ্বব্যাংকের প্রলাপ
থমকে গেল পদ্মাসেতুর সকল কার্যকলাপ।
দেশবিরোধী ভূতগুলো সব বাঁধলো মিলে আঁটি
বিশ্বমোড়ল ঢাললো তাতে আগুনে ঘি খাঁটি
মুজিবকন্যার অটল প্রয়াস দৃঢ় পদক্ষেপে
পদ্মাসেতুর বিরোধীরা উঠলো ভয়ে কেঁপে।
কিন্তু তবু ছড়ায় গুজব ভয় লাগিয়ে দেশে
পদ্মাসেতুর নদীর দানো কল্লা চাইছে শেষে
শিশু-কিশোর ধরে ধরে করলো মিছে গুম
গাঁথলে পিলার বিরোধীরা হয় সবে নির্ঘুম।
বললো কেহ পড়বে ভেঙে বাঁশের চাইতে নরম
যাবেই গলে মাখন হয়ে পড়লে অতি গরম
কেউ বা বলে সেতু তো নয়, এইটা হলো নাটক
বিরোধীদের এই প্রলাপ আজ বুঝে গেছে পাঠক।
পদ্মাসেতুর দৃশ্যমানতা :
দিনে দিনে পদ্মা সেতু জাগলো নদীর বুকে
গৌরবেরই রবির ছটা বাংলাদেশের মুখে
নৌকা হতে সেতুর দেহ দেখতে পেলে চোখে
বর্ণনাহীন রোমাঞ্চে মন ওড়ে ঊর্ধ্বলোকে।
আকাশ হতে দেখতে পেয়ে বিমানবাসী যারা
পদ্মাসেতুর অবয়বে মুগ্ধ হলো তারা
একাত্তরের বিজয় শেষে বাইশের এ দিনে
বাংলাদেশের শক্তি নিলো নূতন করে চিনে।
পদ্মাসেতুর পর্যটনে সবাই আসে ছুটে
পদ্ম যেন পদ্মা-বুকে উঠলো রূপে ফুটে
সেল্ফি তুলে হেলেদুলে পদ্মাসেতুর প্রেমে
ছুটছে সবাই পদ্মাপাড়ে উঠছে নেয়ে ঘেমে।
হাজার গুজব জলে ধুয়ে মুক্ত করে কালো
পদ্মাসেতুর বিজলিবাতি দুই চোখে চমকালো
দেশ-বিদেশের মাধ্যমে আজ উঠলো বেজে বীণা
পদ্মাসেতুর যন্ত্রী একাই সাহসী হাসিনা।
পদ্মাসেতু ও বাংলাদেশ :
আটানব্বই সালে শুরু পদ্মাসেতুর ভাবনা
বাস্তবে তা করতে হবে মোটেই ভুল খো-য়াব না
দুহাজারের একে এসে জুলাই মাসের চারে
শেখ হাসিনা ভিত্তি-শিলা বসায় পদ্মাপাড়ে।
সাতে এসে একনেকে হয় সেতুর বাজেট পাস
আটে এলো শেখ হাসিনা ডিসেম্বরের মাস
বাড়লো বাজেট বাড়লো সময় নকশা পেলো রূপ
বিরোধীরা অবাক হয়ে মেরেই গেলো চুপ।
চারটি লেনে চলবে গাড়ি চলবে নিচে রেল
বিশ্বব্যাংক ও তার দোসরে মারলো ডাহা ফেল
জাপান হতে জাইকা ছিলো বাংলাদেশের পাশে
শেখ হাসিনা প্রজ্ঞা দিয়ে সকল বিঘ্ন নাশে।
নিজের টাকায় বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর জোরে
দেশবিরোধী দলগুলো আজ নখেই মাটি খোঁড়ে
খরস্রোতা নদীর গলায় পরায় সেতুর মালা
নিজের কর্মে হাসিনা দেয় সবার মুখে তালা।