প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২২, ০০:০০
সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সভা সম্পন্ন হয়েছে। দু’দিনব্যাপী এ সভা বুধবার শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। ঢাকা বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন চাঁদপুরের এমন নেতারা ছাড়াও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রায় সকল নেতা মন খুলে তাঁদের বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিক কী কী সমস্যা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দ। সব কিছু ছাপিয়ে চাঁদপুর-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা তথা চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় খুবই গুরুত্ব পায় এবং তা দীর্ঘ হয়। আলোচনায় উঠে আসে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গ, ফেস দ্যা পিপলস নামে বিদেশ ভিত্তিক একটি অনলাইন মিডিয়ায় দেয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, চাঁদপুরের নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গ, জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিষয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী পরিবারে সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ অনলাইন মিডিয়ায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার জন্যে তিনি সভায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দলের পদে থেকে তার এমন সাক্ষাৎকার দেয়া ঠিক হয় নি বলে তিনি সভায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ এবং আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দলীয় ফোরামের বাইরে এমন বক্তব্য দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয় নি। এ প্রসঙ্গে তাঁরা আরো বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র যে চলছে সেটা নেতাদের বুঝতে হবে। ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর আলোচনায় পৌর নির্বাচনে জেলার শীর্ষ নেতাদের যে কোনো ভূমিকা তো ছিলই না, এমনকি নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর নিকটাত্মীয় এবং ব্যক্তিগত লোক দিয়ে যে একের পর এক মামলা দিয়েছেন, ভোট দিতেও যে কেন্দ্রে যান নি সেসব বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন। কয়েকজন নেতা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিভাবকত্ব হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন এবং এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের কর্মকা- দল ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও কোনো কোনো নেতা উল্লেখ করেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে বলা হয়, যে সব উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেগুলোর সম্মেলনের মাধ্যমে দ্রুত কমিটি গঠন করে ফেলতে হবে। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিগণ এবং একটিভ নেতাদের সমন্বয়ে জেলার আট উপজেলা ও চাঁদপুর পৌরসভার জন্যে নয়টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হবে। যারা সম্মেলনসহ সাংগঠনিক নানা বিষয় তদারকি করবেন।
সভায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন বিষয়ে কথা হয়। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত দেন, প্রত্যেক জেলায় নদী রক্ষা কমিটি আছে। এই কমিটি বিষয়টা দেখবে। এটা দলীয় ফোরামে আলোচনার কোনো বিষয় নয়। আর চাঁদপুরের বিষয়টা যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই এটা এখন জেলা নদী রক্ষা কমিটি এবং আদালতের বিষয়।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় প্রসঙ্গে বলা হয়, এটা সরকারের একটা উন্নয়ন প্রকল্প। তাই এটি কোথায় হবে না না হবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। এটাও দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্তের কোনো বিষয় নয়।
এভাবেই আরো নানা বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিজেদের মধ্যে ঐক্য এবং দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
দুদিনের এ সভায় যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে, সেগুলো লিখিত আকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি, উপদেষ্টা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর- ৪ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল আমিন রুহুল, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ইউসুফ গাজী, ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, ইঞ্জিঃ আব্দুর রব ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহছান উল্লাহ আখন্দ, অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, ৮ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৭ পৌরসভার মেয়র প্রমুখ।