প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সমাজসেবার ভবনে পৌর কাউন্সিলরের অনুমতিহীন কার্যালয়
সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্রের টিনশেড ভবন হয়ে গেছে পৌর কাউন্সিলরের কার্যালয়। সম্প্রতি এই কাউন্সিলর সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি ভবনের বেশ ক’টি রুমের মধ্যে প্রধান রুমটি নিজের মতো করে সংস্কার করে অফিস করেছেন। রুমটিতে রং লাগিয়ে পর্দা টানিয়েছেন, দেয়ালে এলইডি টিভি লাগিয়েছেন, ফার্নিচার দিয়ে সাজিয়েছেন, নিজের চেয়ারের পেছনে মাথার উপরে টানিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। আর তারই পাশে ছোট একটি ছবি টানিয়েছেন পৌর মেয়রের। এখন থেকে এই অফিসে বসেই এলাকার সালিসসহ ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি হাজীগঞ্জ পৌর বলাখাল ১নং ওয়ার্ডে।
|আরো খবর
জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মোট ৭টি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি স্থাপনা পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ড তথা বলাখাল সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্র (গণমিলনায়তন কেন্দ্র) একটি। বেশ পুরানো আর সংস্কারহীন অবস্থায় থাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের টিনশেড ভবনটি শিশুদের টিকা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি পৌর ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মাঈনুদ্দিন মিয়াজী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে নিজের জন্য কার্যালয় সাজিয়েছেন। তিনি ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সম্প্রতি তিনি কেন্দ্রটি দখলে নিয়ে নিজের তথা কাউন্সিলর কার্যালয় করেছেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার বাকিলা, বড়কুল ও সদর ইউনিয়নে ৩টি এবং হাজীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ৪টি সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্র (গণমিলনায়তন কেন্দ্র) রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভাধীন আলীগঞ্জ বাজারস্থ কেন্দ্রটি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত এবং বাকিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় বলাখাল বাজারস্থ দিঘির পশ্চিম পাশে বলাখাল সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্রটি উপজেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৮৮ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মতিন। এর অনেক পর হতে বলাখাল কেন্দ্রটি হাজীগঞ্জ পৌরসভা টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন মিয়াজী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেও কাউন্সিলরের কার্যালয় হিসেবে ওই টিনশেড ভবনটি ব্যবহারের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্রটিকে ‘কাউন্সিলর কার্যালয় হাজীগঞ্জ পৌর ১নং ওয়ার্ডের’ উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি তার ছবি ব্যবহার করে ক্যাপশনে লিখেন ‘কাউন্সিলর কার্যালয় হাজীগঞ্জ পৌর ১নং ওয়ার্ডে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলাখাল এলাকার বেশ ক’জন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বলাখালের জমির দাম এখন সোনার চেয়েও দামী হয়ে গেছে। তাই অনেকের দখলের কুদৃষ্টি পড়েছে সরকারের এই সম্পত্তির উপর। মাঈনুদ্দিনকে এ স্থান থেকে এখনই সরিয়ে না দিলে একসময় তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের এ জায়গা নিজ নামে নিয়ে যাবেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
কাউন্সিলর মাঈনুদ্দিন মিয়াজীর সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্রটি দখলে নয়, তিনি অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার কারণে এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। যা মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তা সংস্কার করেছি। বর্তমানে আমি এখানে বসে এলাকার মানুষকে সময় দিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, পৌরসভা এটি টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ঝড় ও বৃষ্টির সময় এখানে বসা যেতো না। আমি এটিকে সংস্কার করেছি। এখন লোকজন বসতে পারছে। তবে সমাজসেবা থেকে কোনো অনুমতি নেননি বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও সমাজসেবা পরিবার উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো (গণমিলনায়তন কেন্দ্র) অন্য কারো ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমন কি এই পরিত্যক্ত ভবনগুলো লিজ দেয়ারও বিধান নেই। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি, আমাদের বলাখাল বাজারস্থ কেন্দ্রটি একজন কাউন্সিলর তার নিজ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিষয়টি শোনার পর আমি পৌর মেয়রকে অবহিত করেছি। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।